পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের ইলিশ বিচরণের ৫টি অভয়াশ্রমে সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। মা ইলিশ ইলিশ সংরক্ষণে মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এ সময় ইলিশ পরিববহন, বিক্রয় ও মজুদ নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো জেলে নদীতে নামলে তার বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে মামলাসহ জেল জরিমানার বিধান রয়েছে।
এদিকে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের প্রণোদনা হিসেবে মাথাপিছু ২০ কেজি হারে চাল দেওয়া হবে।
জানা গেছে, গতবছর থেকে ৬ দিন পিছিয়ে এবার ১৪ অক্টোবর থেকে মা ইলিশ সংরক্ষণে অভয়াশ্রমগুলোতে সবধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ভোলা ও বরিশাল জেলার কয়েকটি নদীতে ৫টি অভয়াশ্রম রয়েছে। যেখানে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সাগরের নোনা পানি ছেড়ে নদীর মিঠা পানিতে ডিম ছাড়তে ছুটে আসে।
এ সময় ডিমওয়ালা মা ইলিশের নির্বিঘ্ন চলাচল এবং প্রজননের জন্য অভয়াশ্রমগুলোতে সবধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। শুধু তাই নয়, এ সময় ইলিশ পরিববহন, বিক্রয় ও মজুদ নিষিদ্ধ থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো জেলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামলে তার বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে মামলাসহ জেল জরিমানার বিধান রয়েছে।
চাঁদপুরের উত্তরে ষাটনল থেকে দক্ষিণে লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত এক শ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীতে দেশের সবচেয়ে বড় অভয়াশ্রম। মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানান, এই অভয়াশ্রমের চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনা ব্যাপী মা ইলিশের বিচরণ ব্যাপকহারে বেড়ে যায়।
কারণ, এখানে নদীর তলদেশে ইলিশের বিশেষ জলজ খাবার প্লাংক্টন থাকে। এটি ইলিশের জন্য সবচেয়ে উপাদেয় খাবার। তাই অন্য অভয়াশ্রমের চেয়ে এখানে ইলিশের বিচরণ উল্লেখ করার মতো। যে কারণে এই ২২ দিন জেলেরা নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলে তা ইলিশ প্রজননে বড়ধরনের সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
দেশের অন্যতম মৎস্যবিজ্ঞানী, ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে বিগত দিনে সরকারি নানা উদ্যোগের কারণে এবছর ইলিশের আকারও বেড়েছে। এতে উৎপাদনে যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ এবং পরবর্তীতে জাটকা সংরক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদনের হার ৬ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছাবে।
আরও পড়ুন : ধরি ইলিশ কিন্তু খাই পাঙ্গাশ
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, এবারে চাঁদপুরের ৫০ হাজার জেলেকে এই ২২ দিনের জন্য প্রণোদনা হিসেবে ২০ কেজি হারে চাল দেওয়া হবে। তবে এ সময় কোনো জেলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে নামলে তার বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে জেল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির অন্যতম সদস্য চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মা ইলিশ সংরক্ষণে এবং জেলেদের সতর্ক রাখতে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, জেলা পুলিশ, মৎস্যবিভাগ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিকে আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, নদীতে সবধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে। তাই চাঁদপুরের নদীপাড়ের জেলেরা তাদের জাল নৌকা নিরাপদে সরিয়ে রাখতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে, দক্ষিণের সাগর উত্তাল থাকায় মাছের আড়তগুলোতেও ইলিশের তেমন সরবরাহ দেখা যায়নি। ফলে শেষ মূহূর্তে এসে যা সরবরাহ হচ্ছে তার দরদামও বেশ। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত চাঁদপুরের বড়স্টেশন পাইকারি মাছ বাজারসহ নদীপাড়ের অন্য মাছ বাজারগুলো খোলা থাকছে।