নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন ঈদযাত্রা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু এবারের ঈদে অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই কমলাপুর স্টেশনে টিকিট কেনার লোক নেই। টিকিটের জন্য নেই হাহাকার, হয়রানি, ঝক্কি-ঝামেলাও। এ যেন ভিন্ন এক চিত্র। অথচ এ রেলস্টেশনে ঈদ এলেই হাজার হাজার মানুষ টিকিট ক্রয়ে রাত জেগে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপর অনেকের মিলতো না কাঙ্ক্ষিত টিকিট। কিন্তু গত ঈদের মতো এবারও শতভাগ অনলাইনে টিকিট বিক্রির কারণে কমলাপুর রেলস্টেশনে নেই মানুষের ভিড়।
বুধবার (১৪ জুন) সকালে কমলাপুর স্টেশনে এ চিত্র দেখা যায়। এদিকে আজ সকাল ৮ টায় শুরু হয় ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। দ্বিতীয়বারের মতো এবারের ঈদযাত্রায়ও আন্তঃনগর ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে, অনলাইনে চাপ কমাতে এবার নেওয়া হয়েছে নতুন পদক্ষেপ। সকাল ৮টায় বিক্রি শুরু হয় পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট আর দুপুর ১২টায় বিক্রি শুরু হবে পূর্বাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট।
তবে এবারই প্রথম অঞ্চলভেদে দুই শিফটে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। একসঙ্গে সব টিকিটপ্রত্যাশীদের সার্ভারে চাপ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এবারের ঈদযাত্রায়ও আন্তঃনগর ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রথম দিনে ট্রেনের অগ্রিম ২৬ হাজার ৫৫২ টি টিকিট বিক্রি হবে। পশ্চিমাঞ্চলে সকালে এবং পূর্বাঞ্চলের জন্য ১২ টার পর থেকে এ টিকিট বিক্রি হবে।
রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৯ জুনকে ঈদুল আজহার দিন ধরে এবার ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বরাবরের মতো সকাল ৮টায় রেলওয়ের ই-টিকিটিং ওয়েবসাইট ও রেলসেবা অ্যাপে এ টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তবে, এবারই প্রথম অঞ্চলভেদে দুই শিফটে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। একসঙ্গে সব টিকিটপ্রত্যাশীদের সার্ভারে চাপ কমাতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
১৪ জুন বিক্রি হচ্ছে ২৪ জুনের টিকিট, ১৫ জুন ২৫ জুনের টিকিট, ১৬ জুন ২৬ জুনের টিকিট, ১৭ জুন ২৭ জুনের টিকিট এবং ১৮ জুন ২৮ জুনের টিকিট বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঈদের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ২৯, ৩০ জুন ও ১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হবে। এছাড়া যাত্রী সাধারণের অনুরোধে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারবলেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রি সহজ হওয়ায় যাত্রীরা ঘরে বসেই টিকিট পাচ্ছে। প্রথম দিনে ২৬ হাজার ৫৫২ টিকিট বিক্রি হবে। সকালে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১২ টার পর পূর্বাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, পূর্বাঞ্চলের টিকিট বিক্রির চাপ কিছুটা কম থাকে। তবে, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী সব ট্রেনের টিকিট বিক্রির চাপ বেশি থাকে।
সকাল ৮টায় যেসব ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়
একতা এক্সপ্রেস (৭০৫/৭০৬), করতোয়া এক্সপ্রেস (৭১৩/৭১৪), কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস (৭১৫/৭১৬), সুন্দরবন এক্সপ্রেস (৭২৫/৭২৬), রুপসা এক্সপ্রেস (৭২৭/৭২৮), বরেন্দ্র এক্সপ্রেস (৭৩১/৭৩২), তিতুমীর এক্সপ্রেস (৭৩৩/৭৩৪), সীমান্ত এক্সপ্রেস (৭৪৭/৭৪৮), লালমনি এক্সপ্রেস (৭৫১/৭৫২), সিল্কসিটি এক্সপ্রেস (৭৫৩/৭৫৪), মধুমতী এক্সপ্রেস (৭৫৫/৭৫৬), দ্রুতযান এক্সপ্রেস (৭৫৭/৭৫৮), পদ্মা এক্সপ্রেস (৭৫৯/৭৬০), সাগড়দাড়ি এক্সপ্রেস (৭৬১/৭৬২), চিত্রা এক্সপ্রেস (৭৬৩/৭৬৪), নীলসাগর এক্সপ্রেস (৭৬৫/৭৬৬), দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস (৭৬৭/৭৬৮), ধুমকেতু এক্সপ্রেস (৭৬৯/৭৭০), রংপুর এক্সপ্রেস (৭৭১/৭৭২), সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস (৭৭৫/৭৭৬), ঢালারচর এক্সপ্রেস (৭৭৯/৭৮০), টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস (৭৮৩/৭৮৪), বনলতা এক্সপ্রেস (৭৯১/৭৯২), পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩/৭৯৪), বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৫/৭৯৬), কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস (৭৯৭/৭৯৮), বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস (৮০৩/৮০৪) এবং চিলাহাটি এক্সপ্রেস (৮০৫/৮০৬)।
দুপুর ১২টায় যেসব ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে
সুবর্ণ এক্সপ্রেস (৭০১/৭০২), গোধূলি/প্রভাতী এক্সপ্রেস (৭০৩/৭০৪), তিস্তা এক্সপ্রেস (৭০৭/৭০৮), পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯/৭১০), উপকূল এক্সপ্রেস (৭১১/৭১২), জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস (৭১৭/৭১৮), পাহাড়িকা এক্সপ্রেস (৭১৯/৭২০), মহানগর এক্সপ্রেস (৭২১/৭২২), উদয়ন এক্সপ্রেস (৭২৩/৭২৪), মেঘনা এক্সপ্রেস (৭২৯/৭৩০), অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস (৭৩৫/৭৩৬), এগারোসিন্ধুর প্রভাতী এক্সপ্রেস (৭৩৭/৭৩৮), উপবন এক্সপ্রেস (৭৩৯/৭৪০), তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪১/৭৪২), ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস (৭৪৩/৭৪৪), যমুনা এক্সপ্রেস (৭৪৫/৭৪৬), এগারোসিন্ধুর গোধূলি এক্সপ্রেস (৭৪৯/৭৫০), কালনী এক্সপ্রেস (৭৭৩/৭৭৪), হাওড় এক্সপ্রেস (৭৭৭/৭৭৮), কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস (৭৮১/৭৮২), বিজয় এক্সপ্রেস (৭৮৫/৭৮৬), সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৭/৭৮৮), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (৭৮৯/৭৯০), জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৯/৮০০) এবং চট্টলা এক্সপ্রেস (৮০১/৮০২)।
চলবে বিশেষ ট্রেন
রেলের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৬ জুন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরদিন থেকে পাঁচ দিন চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ পথে তিন জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।
এছাড়া এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে। আর ৪ জুন থেকে ঢাকা-চিলাহাটি-ঢাকা রুটে চিলাহাটি এক্সপ্রেস নামে একজোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে বলেও জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
চার কাউন্টারে থাকবে স্ট্যান্ডিং টিকিট
ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন ৩২ হাজার আসনে যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। মোট আসনের ২৫ শতাংশ টিকিট দাঁড়িয়ে (স্ট্যান্ডিং টিকিট) যাওয়া যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা হবে।
স্ট্যান্ডিং টিকিট পাওয়া যাবে শুধু ঢাকার কমলাপুর, ক্যান্টনমেন্ট ও বিমানবন্দর এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে। মাঝপথে বিরতি নেয় এমন কোনো স্টেশনে স্ট্যান্ডিং টিকিট পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত ইঞ্জিন ও বগি
এদিকে, রেলের অবহিতকরণ সভায় ঈদযাত্রার ট্রেনে অতিরিক্ত ইঞ্জিন ও বগি যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঈদযাত্রায় ৬৫টি অতিরিক্ত বগি যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৪০টি মিটারগেজ ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ২৫টি ব্রডগেজ বগি আনা হবে।
এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে পূর্বাঞ্চলে ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১০২টি মিলিয়ে মোট ২১৮টি অতিরিক্ত ইঞ্জিন যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
তাছাড়া এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে।