Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনজীবীরা কথা বললে রিমান্ড বেড়ে যায় : আদালতে পলক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আদালতে কথা বললে রিমান্ড বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কথা বললেই রিমান্ড বাড়িয়ে দেয়। আইনজীবীরা কথা বললে রিমান্ড বেড়ে যায়।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে এক মামলার শুনানির আগে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন ধানমন্ডি থানার মো. রিয়াজ হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানির জন্য তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

এ সময় নিজের ব্যক্তিগত আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমরা কথা বললেই তো রিমান্ডের পরিমাণ বেড়ে যায়। তারা তো (রাষ্ট্রপক্ষ) বলেছে, রিমান্ড তো শুরু। তাই কথা বলার দরকার নেই। আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। এটা কোনোভাবে পরিবর্তন করা যাবে না।

সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে পলককে বের করা হয়। তাকে হেলমেট, হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো হয়েছিল। হেঁটে আদালতে যাওয়ার পথে তিনি উপস্থিতদের উদ্দেশ করে বলেন, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে সাময়িকভাবে আড়াল করা গেলেও সত্যের জয় অনিবার্য, ইন শা আল্লাহ।

বিচারক আসন গ্রহণের আগে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পলক বলেন, আমাকে তো নিয়মিত আদালতে আসা লাগে। তবে যেদিন আসা লাগে না সেদিন কারাগারে হাঁটতে বের হলে জেলের বন্দিরা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ভাই আজকে আপনার অফিস নেই। আদালতে হাজিরা নিয়ে তারা মজা করে। আদালতকে তারা আমার অফিস ভাবে। জেল জীবন মারাত্মক। জীবনে শিক্ষার জন্য সাত দিন হলেও কারাগারে থাকা উচিত। আমি যদি কখনো কারাগার থেকে বের হতে পারি তখনও এই কথা বলবো।

জেল জীবন মারাত্মক। শিক্ষা পেতে হলেও অপরাধ যারা করে তাদের সাতদিন কারাগারে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে পলক বলেন, চিড়া মুড়ি খাওয়ারও টাকা নাই। কারাগারে সুমনের (ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন) সঙ্গে রুটি কলা ভাগ করে খাই।

তিনি আরও বলেন, জেলখানার জীবন মারাত্মক শিক্ষার জীবন। সবার কম করে হলেও সাত দিন জেলে থাকা উচিত। যদি কখনো কারাগার থেকে বের হতে পারি তখনও এই কথা বলব।’ এ সময় পুলিশ তাকে কথা বলতে নিষেধ করেন। জবাবে পলক বলেন, ‘আমি কোনো বেআইনি কথা বলছি না।

এর পর মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে সালাম দেন পলক। তবে প্রথমে সাড়া না দিলেও পরবর্তীতে পিপি তার সালামের উত্তর দেন। এরপর পলক বলেন, যাক এইবার পিপি স্যারের মন নরম হয়েছে।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের নিয়ে লেখার সময় আপনারা একটু সদয় হবেন।

এ সময় পলক আইনজীবীদের বলেন, ‘আমি এত পরিমাণে আদালতে আসি যে, সকালে কারাগারে হাঁটতে বের হলে তখন বন্দিরা আমাকে বলে ‘আজকে আপনার অফিস নেই?’। আদালতকে তারা আমার অফিস ভাবে।

শুনানি শেষে পলককে ধানমন্ডি থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম। পরে তাকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গারদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে এজলাসে ওঠেন বিচারক। পরে রিয়াজ হত্যা মামলায় পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে পুলিশ প্রহরায় তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে জিগাতলা এলাকায় যাওয়ার পথে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন মো. রিয়াজ (২৩)। দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৭ আগস্ট বিকালে মারা যান।

এ ঘটনায় নিহতের মা মোসা. শাফিয়া বেগম ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আইনজীবীরা কথা বললে রিমান্ড বেড়ে যায় : আদালতে পলক

প্রকাশের সময় : ০৪:২৪:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আদালতে কথা বললে রিমান্ড বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কথা বললেই রিমান্ড বাড়িয়ে দেয়। আইনজীবীরা কথা বললে রিমান্ড বেড়ে যায়।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে এক মামলার শুনানির আগে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন ধানমন্ডি থানার মো. রিয়াজ হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানির জন্য তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

এ সময় নিজের ব্যক্তিগত আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমরা কথা বললেই তো রিমান্ডের পরিমাণ বেড়ে যায়। তারা তো (রাষ্ট্রপক্ষ) বলেছে, রিমান্ড তো শুরু। তাই কথা বলার দরকার নেই। আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। এটা কোনোভাবে পরিবর্তন করা যাবে না।

সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে পলককে বের করা হয়। তাকে হেলমেট, হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো হয়েছিল। হেঁটে আদালতে যাওয়ার পথে তিনি উপস্থিতদের উদ্দেশ করে বলেন, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে সাময়িকভাবে আড়াল করা গেলেও সত্যের জয় অনিবার্য, ইন শা আল্লাহ।

বিচারক আসন গ্রহণের আগে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পলক বলেন, আমাকে তো নিয়মিত আদালতে আসা লাগে। তবে যেদিন আসা লাগে না সেদিন কারাগারে হাঁটতে বের হলে জেলের বন্দিরা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ভাই আজকে আপনার অফিস নেই। আদালতে হাজিরা নিয়ে তারা মজা করে। আদালতকে তারা আমার অফিস ভাবে। জেল জীবন মারাত্মক। জীবনে শিক্ষার জন্য সাত দিন হলেও কারাগারে থাকা উচিত। আমি যদি কখনো কারাগার থেকে বের হতে পারি তখনও এই কথা বলবো।

জেল জীবন মারাত্মক। শিক্ষা পেতে হলেও অপরাধ যারা করে তাদের সাতদিন কারাগারে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে পলক বলেন, চিড়া মুড়ি খাওয়ারও টাকা নাই। কারাগারে সুমনের (ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন) সঙ্গে রুটি কলা ভাগ করে খাই।

তিনি আরও বলেন, জেলখানার জীবন মারাত্মক শিক্ষার জীবন। সবার কম করে হলেও সাত দিন জেলে থাকা উচিত। যদি কখনো কারাগার থেকে বের হতে পারি তখনও এই কথা বলব।’ এ সময় পুলিশ তাকে কথা বলতে নিষেধ করেন। জবাবে পলক বলেন, ‘আমি কোনো বেআইনি কথা বলছি না।

এর পর মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে সালাম দেন পলক। তবে প্রথমে সাড়া না দিলেও পরবর্তীতে পিপি তার সালামের উত্তর দেন। এরপর পলক বলেন, যাক এইবার পিপি স্যারের মন নরম হয়েছে।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের নিয়ে লেখার সময় আপনারা একটু সদয় হবেন।

এ সময় পলক আইনজীবীদের বলেন, ‘আমি এত পরিমাণে আদালতে আসি যে, সকালে কারাগারে হাঁটতে বের হলে তখন বন্দিরা আমাকে বলে ‘আজকে আপনার অফিস নেই?’। আদালতকে তারা আমার অফিস ভাবে।

শুনানি শেষে পলককে ধানমন্ডি থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম। পরে তাকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গারদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে এজলাসে ওঠেন বিচারক। পরে রিয়াজ হত্যা মামলায় পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে পুলিশ প্রহরায় তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে জিগাতলা এলাকায় যাওয়ার পথে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন মো. রিয়াজ (২৩)। দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৭ আগস্ট বিকালে মারা যান।

এ ঘটনায় নিহতের মা মোসা. শাফিয়া বেগম ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।