Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় সম্মত ট্রাম্প-পুতিন

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ১২:২০:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২০২ জন দেখেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ‘দীর্ঘ এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ ফোনালাপ হয়েছে। উভয় নেতা ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে জানান, তিনি এবং পুতিন তাদের নিজ নিজ দলকে তাদের নিজ দলকে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার নির্দেশ দিতে সম্মত হয়েছেন এবং একে অপরকে নিজ নিজ রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এরপর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ‘দীর্ঘস্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য শান্তি’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা করেছেন।

বিবিসি বলছে, যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে এই ফোনালাপ এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন ট্রাম্প এবং তার প্রতিরক্ষা সচিব উভয়েই বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি কিয়েভের জন্য একটি বড় হতাশার কারণ হতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, তিনি শুক্রবার মিউনিখে ইউক্রেন সংক্রান্ত একটি প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করার সময় এসেছে, যেখানে ব্যাপক ও সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু এবং ধ্বংস ঘটেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ কামনা করি!

ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের জন্য কোনো তারিখ জানাননি। তবে পরে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সৌদি আরবে সাক্ষাৎ করব।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেন এবং এখনই শান্তি আলোচনার সময় এসেছে বলে মনে করেন।

পেসকভ জানান, পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা ফোনালাপ হয়েছে। এসময় রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট মস্কো সফরের জন্য ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের জানান, ২০১৪ সালের আগের সীমান্তে ইউক্রেনের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

ট্রাম্প আরো জানান, তিনি তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে একমত; যিনি বুধবার ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, সামরিক জোটে ইউক্রেনের যোগদানের কোনো সম্ভাবনা নেই।

ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি এটি সম্ভবত সত্য।

এদিকে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার বলেন, কিয়েভের প্রতি লন্ডনের সমর্থন ‘অটল’ রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদক জেমস ওয়াটারহাউজের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনের প্রতি আগের মতো সহানুভূতিশীল নয় এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের বক্তব্য মস্কোর জন্য লাভজনক হতে পারে।

বিবিসির প্রতিবেদক বলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটভুক্ত করতে অস্বীকার করা হয়েছে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে, ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না এবং ভবিষ্যতে একটি স্থবির ফ্রন্ট লাইন কীভাবে পুলিশিং করা হবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল। এই বিষয়টি রাশিয়ার দীর্ঘদিনের আগ্রাসনের সুবিধা বাড়াবে।

জেলেনস্কি দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছিলেন যে, ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হতে পারে না। তবে ট্রাম্প এবং পুতিন তার অনুপস্থিতিতেই আলোচনা করেছেন। তবে তিনি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার আলোচনা ‘ভালো ও বিস্তারিত’ ছিল এবং তিনি মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।

জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে লেখেন, ইউক্রেনের চেয়ে শান্তি আর কেউ বেশি চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে আমরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং একটি স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য শান্তি নিশ্চিত করতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করছি।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় নেতাদের মধ্যে এক ঘণ্টা ধরে ফোনালাপ হয়েছে।

গত মঙ্গলবার দ্যা গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূমির বদলে রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা বিনিময়ের প্রস্তাব দেন। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়া কখনোই তার ভূখণ্ড বিনিময় নিয়ে আলোচনা করেনি এবং করবে না। ইউক্রেনীয় সেনাদের আমাদের অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

প্রায় তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন চালায়। এই যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখল করেছে এবং সারা দেশে আকাশ থেকে হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেন এর জবাবে আর্টিলারি, ড্রোন হামলা এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে স্থল যুদ্ধ চালাচ্ছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় সম্মত ট্রাম্প-পুতিন

প্রকাশের সময় : ১২:২০:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ‘দীর্ঘ এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ ফোনালাপ হয়েছে। উভয় নেতা ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে জানান, তিনি এবং পুতিন তাদের নিজ নিজ দলকে তাদের নিজ দলকে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার নির্দেশ দিতে সম্মত হয়েছেন এবং একে অপরকে নিজ নিজ রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এরপর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ‘দীর্ঘস্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য শান্তি’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা করেছেন।

বিবিসি বলছে, যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে এই ফোনালাপ এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন ট্রাম্প এবং তার প্রতিরক্ষা সচিব উভয়েই বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি কিয়েভের জন্য একটি বড় হতাশার কারণ হতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, তিনি শুক্রবার মিউনিখে ইউক্রেন সংক্রান্ত একটি প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করার সময় এসেছে, যেখানে ব্যাপক ও সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু এবং ধ্বংস ঘটেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ কামনা করি!

ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের জন্য কোনো তারিখ জানাননি। তবে পরে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সৌদি আরবে সাক্ষাৎ করব।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেন এবং এখনই শান্তি আলোচনার সময় এসেছে বলে মনে করেন।

পেসকভ জানান, পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা ফোনালাপ হয়েছে। এসময় রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট মস্কো সফরের জন্য ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের জানান, ২০১৪ সালের আগের সীমান্তে ইউক্রেনের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

ট্রাম্প আরো জানান, তিনি তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে একমত; যিনি বুধবার ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, সামরিক জোটে ইউক্রেনের যোগদানের কোনো সম্ভাবনা নেই।

ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি এটি সম্ভবত সত্য।

এদিকে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার বলেন, কিয়েভের প্রতি লন্ডনের সমর্থন ‘অটল’ রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদক জেমস ওয়াটারহাউজের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনের প্রতি আগের মতো সহানুভূতিশীল নয় এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের বক্তব্য মস্কোর জন্য লাভজনক হতে পারে।

বিবিসির প্রতিবেদক বলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটভুক্ত করতে অস্বীকার করা হয়েছে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে, ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না এবং ভবিষ্যতে একটি স্থবির ফ্রন্ট লাইন কীভাবে পুলিশিং করা হবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল। এই বিষয়টি রাশিয়ার দীর্ঘদিনের আগ্রাসনের সুবিধা বাড়াবে।

জেলেনস্কি দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছিলেন যে, ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হতে পারে না। তবে ট্রাম্প এবং পুতিন তার অনুপস্থিতিতেই আলোচনা করেছেন। তবে তিনি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার আলোচনা ‘ভালো ও বিস্তারিত’ ছিল এবং তিনি মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।

জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে লেখেন, ইউক্রেনের চেয়ে শান্তি আর কেউ বেশি চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে আমরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং একটি স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য শান্তি নিশ্চিত করতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করছি।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় নেতাদের মধ্যে এক ঘণ্টা ধরে ফোনালাপ হয়েছে।

গত মঙ্গলবার দ্যা গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূমির বদলে রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা বিনিময়ের প্রস্তাব দেন। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়া কখনোই তার ভূখণ্ড বিনিময় নিয়ে আলোচনা করেনি এবং করবে না। ইউক্রেনীয় সেনাদের আমাদের অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

প্রায় তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন চালায়। এই যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখল করেছে এবং সারা দেশে আকাশ থেকে হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেন এর জবাবে আর্টিলারি, ড্রোন হামলা এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে স্থল যুদ্ধ চালাচ্ছে।