নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার দেশে ভয়াবহ কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আপনাদের আরেকটি আশঙ্কার কথা বলি, এটা বলা দরকার, জাতির জানা উচিত, আজকে এই সরকার পরিকল্পনা করছে দেশে ভয়াবহ কিছু ঘটাতে, যাতে নির্বাচনে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা যায়। তারা আরেকটি নির্বাচন করতে চায়, যেমন করে অতীতে (২০১৪ এবং ২০১৮ সালে) ক্ষমতায় এসেছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, ২১ আগস্ট সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক। তারা যেখানে সভা করতে চেয়েছিল সেখানে করেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নাম জড়ানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত সঠিক হয়নি বলে দাবি করে বিএনপি বলেন, এ ঘটনায় তারেক রহমান কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। এই মামলায় প্রথমে তারেক রহমান সংযুক্ত ছিলেন না। তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কাহার আকন্দ যিনি পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন, তার তদন্তেও তারেক রহমানের নাম উল্লেখ ছিল না। একমাত্র মুফতি হান্নানকে ৪৫ দিন আটকে রেখে জোর করে জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে তারেক রহমানকে যুক্ত করা হয়। এমনকি মুফতি হান্নান এই জবানবন্দীর বিরুদ্ধে এফিডেভিট দিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করেন। পরবর্তীতে মুফতি হান্নানকে অন্য একটি মামলায় ফাঁসি তড়িঘড়ি করে রায় কার্যকর করা হয়। যাতে তিনি এই মামলায় পরবর্তীতে আর কোর্টে আসার কোনো সুযোগ না পান। সুতরাং এখানে তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর কেউই জড়িত নন।
ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক রহমানের নাম এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে মামলা শেষ করা হয়েছে। আমরা বারবার বলে এসেছি এই মামলায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি জঘন্য ঘটনা। তারেক রহমানসহ বিএনপির কোনো নেতা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ভারত সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা জনগণের কাছে যেতে পারে না তারাই এভাবে ফায়দা নিতে চায়। আমরা চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জনগণ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবেন এমন একটি নির্বাচন।
তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে বিরোধীদলের মাঠ শূন্য করতে আবারও চক্রান্ত চলছে। একই কায়দায় গত পরশুদিন রাতে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। গত শনিবার হবিগঞ্জে সাবেক মেয়র জি কে গউছের বাড়িতে গুলি করা হয়। তিনশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও গুলি করেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বিরোধীদল শূন্য নির্বাচন করতে চায়।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন শুরু হয়েছে মেগাপ্রকল্প চালু করা। কার জন্য? কিসের জন্য? এগুলোর লক্ষ্য হলো তাদের পকেট ভরানো। এগুলো তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সুতরাং এখানে তো বলার কিছু নেই যে আপনি উন্নয়ন করেছেন! আজকে জাতি এদের হাত থেকে মুক্তি চায়।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখনো রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হইনি। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করি। তাদের নিয়েই আমরা আছি। আজকে দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। সেই বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এ ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমেরিকার কেউ স্বীকার করেনি। ভারতেরও কেউ স্বীকার করেনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম)। যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তিনি এমন সময় দেশের হাল ধরেন যখন তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সকল দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। এর প্রেক্ষিতে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় দেশ একটি দলের হাতে চলে গিয়েছিল। আজকে জিয়াউর রহমান স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া যোগ্য নেতৃত্ব বিএনপি এগিয়ে চলেছে।
ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমরা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছি। এই সরকার দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করেছে। প্রশাসন বলুন, আর কিছু বলুন, সবকিছু ধ্বংস করেছে। আজকে একটি কোম্পানি ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ তাদের নিজেদের লক্ষ্য সেটা। আমরা ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াই করে যাচ্ছি। এখানে সবারই ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। সকলকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
অস্ত্রসহ ছাত্রদলের নেতাদের গ্রেফতার দেখানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তাদেরকে যে অস্ত্র দেখিয়ে আটক দেখানো হয়েছে, এইগুলো তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর) রেখে দেওয়া অস্ত্র। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এই অস্ত্রগুলো জব্দ করবে, এরপর গোলযোগ সৃষ্টি করবে আর বিএনপির ওপর দায় চাপাবে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একগুচ্ছ কর্মসূচি পালন করা হবে জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ওইদিন সকাল ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফাতিহা পাঠ ও শ্রদ্ধা জানাবেন সিনিয়র নেতারা। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। তবে এগুলোর তারিখ ও সময় পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, ছাত্রদলের রাজিবুল ইসলাম রাকিব, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মজিবুর রহমান, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকনসহ অনেকে।