১৯৮৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়া গোলটির কারণে পিটার শিলটনের কাছে এখনো ‘প্রতারক’ ম্যারাডোনা। পিটার শিলটনের উচ্চতা ১.৮৩ মিটার। ডিয়োগো ম্যারাডোনার উচ্চতা ১.৬৫ মিটার। অথচ বেঁটে-খাটো ম্যারাডোনা দীর্ঘদেহী শিলটনকে পরাস্ত করে ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোলের স্রষ্টা!
৩৫ বছর ধরে ম্যারাডোনার ঐ শিল্পিত গোলকে ‘আনস্পোর্টসম্যানশিপ’ বলে গেছেন সাবেক ইংলিশ গোলরক্ষক শিলটন। এমনকি ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরও শিলটন তাকে ক্ষমা করতে পারেন নি।
ইউরোপ-আমেরিকা-লাতিন অঞ্চলের অসংখ্য সংবাদমাধ্যম চেষ্টা করেছে দু’জনকে এক মঞ্চে বসানোর! কিন্তু বৃথা গেছে সব চেষ্টা, শিলটন ছিলেন একরোখা! আর সেই সুযোগ নেই। গত বুধবার অসীমের পথে পাড়ি জমিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ডিয়োগো ম্যারাডোনা।
আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির মৃত্যুর পর বৃটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলে কলাম লিখেছেন ৭১ বছর বয়সী শিলটন। ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করলেও আবারো বলেছেন ‘আনস্পোর্টসম্যানশিপ’- এর কথা। শিলটন তার কলামে লিখেছেন, ‘ম্যারাডোনার সঙ্গে আমার নামটা বারবার উচ্চারিত হয়েছে।
আরও পড়ুন : নেপোলির সবাই ম্যারাডোনা ইউরোপা লীগের ম্যাচে!
তার সঙ্গে আমার নাম এভাবে জড়াক তা চাইনি। ম্যারাডোনার এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ায় আমি ব্যাথিত। আমার দেখা সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনা। সর্বকালের সেরাদেরও একজন। ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে যদি ফিরে যাই তাহলে বলতে হবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটার কথা। এই ম্যাচটা ইংল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা।
সেই ম্যাচে ম্যারাডোনা আমাদের জন্য ছিলেন আতঙ্কের অপর নাম। তাকে কোনভাবেই থামানো যায়নি। কোন পরিকল্পনা কাজে আসেনি। এক ঘন্টারও বেশি সময় আমাদের এমন পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছিলাম না সে কি করবে বা কি করতে পারে।’
এরপরই শিলটন বর্ণনা করলেন ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে খ্যাত গোলটির, ‘আমিও বেশ কয়েকবার দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ি। ম্যারাডোনা আমাকে উচ্চতায় চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। এরকম উচ্চতায় যে পৌঁছাতে পারবে না তা জনতো সে। তখন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হাত দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেয়। এটা সম্পূর্ণ অখেলোয়াড় সুলভ। যা প্রতারণার সামিল। আমি তখন খেয়াল করেছিলাম ম্যারাডোনা গোল উদযাপনের জন্য দৌড় দিয়েছিল।
সে সময় দুইবার পেছনে থাকা রেফারির দিকে তাকিয়ে ছিল। আমার মনে হয়েছে সে গোলের বাঁশি বাজানোর জন্য অপেক্ষা করছিল। কারণ ম্যারাডোনা জানতো সে কি করেছে। সবাই সেটা বুঝতেও পেরেছিল। শুধু রেফারি ও সহকারী ছাড়া। ম্যারাডোনা কখনই আমার পছন্দের মানুষের তালিকায় ছিলেন না। কারণ সে কখনই ওই গোলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি। বারবার শুধু বলেছে, ওটা ‘হ্যান্ড অফ গড’ ছিল।’