নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত রায়ের বাজারে কবরস্থানে দাফনকৃত মরদেহ উত্তোলন করা হবে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো.ছিবগাত উল্লাহ।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অজ্ঞাতপরিচয় শহীদদের মরদেহ উত্তোলনপূর্বক শনাক্তকরণ কার্যক্রম বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সিআইডি প্রধান বলেন, আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তখন তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির কাছে আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন। আন্তর্জাতিক প্রোটোকল, মিনেসোটা প্রোটোকল অনুসরণ করে মরদেহ উত্তোলন, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব স্টেকহোল্ডারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত হয়েছে, যা বাস্তবে কমবেশি হতে পারে। মরদেহ উত্তোলনের পর পোস্টমর্টেম, বোন স্যাম্পল বা টিস্যু সংগ্রহ এবং ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে পুনরায় দাফন করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর কেউ মরদেহ গ্রহণ করতে চাইলে পারবেন।
আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জনের স্বজন আবেদন করেছেন। আরও কেউ থাকলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন। সিআইডি হটলাইনে যোগাযোগ করলে স্বজনদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে।
মো.ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আমরা জানি না কোন কবরে কে আছেন। তাই এই প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সব শহীদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী মরদেহের কোনও ছবি বা সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। বিষয়টি অত্যন্ত সম্মানজনক ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট। এ ক্ষেত্রে সবার পূর্বের মতো সহযোগিতা প্রয়োজন।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা, ভাই-বোন বছরের পর বছর তাদের আপনজনদের পরিচয়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন। আমরা এই বেদনার দায় থেকে দেশকে মুক্ত করতে চাই।
তিনি সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা, চিকিৎসক, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, ডিএমপি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ইউএনএইচআর)-এর আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডির সঙ্গে কাজ করছি। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আন্তর্জাতিক ফরেনসিক মানদণ্ড অনুসরণ করেই এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে স্থানীয় সংস্থা সিআইডিকে সহযোগিতা করা হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 






















