Dhaka বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রংপুরে মাকে হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

রংপুরে মাকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে মো. জামিল মিয়া ভেলন (৩২) নামের এক ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এ রায় ঘোষণা করেন।

আসামী জামিল মিয়া রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ (ময়নুদ্দিনটারী) গ্রামের মৃত জামিলা বেগমের একমাত্র ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জামিল মিয়ার স্ত্রী কাকলী খাতুনের সঙ্গে তার মা জামিলা বেগমের পারিবারিক কলহ চলছিল। স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে কাকলী খাতুন বাবার বাড়িতে চলে গেলে জামিল মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হন। পরে ২০২২ সালের ১৯ আগস্ট রাতে খাবার খেয়ে মা-ছেলে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক ১টার দিকে জামিল ঘুম থেকে উঠে তার ঘুমন্ত মাকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

পরে ঘরের মেঝেতে গর্ত খুঁড়ে মায়ের মরদেহ সেখানে পুঁতে রাখেন। প্রতিবেশী-স্বজনদের জানান তার মা কোথায় গিয়েছে তিনি জানেন না। তবে কয়েকদিন পর ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করলে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ঘরের মাটি খুড়ে জামিলা বেগমের মরদেহ খুঁজে পান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. ছামসুল হক বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আফতাব উদ্দিন এবং আসামিপক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. শামীম আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষ মোট ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য–প্রমাণে আসামির দোষ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, সাধারণ মানুষ জানান-একজন মা সন্তানের জীবনের জন্য যে ত্যাগ করেন, সেই সন্তানের হাতে মায়ের মৃত্যু সমাজে সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধের উদাহরণ। এই হত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া বিকল্প কিছু হতে পারে না।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, এই রায়ে মানবিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। আদালত প্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক বিচার দিয়েছেন।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রতিফলিত হলো পরিবারের ভেতরে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকল্প কিছু নেই। নিজের জন্মদাত্রী মায়ের জীবন কেড়ে নেওয়া যে কোনো অপরাধের ঊর্ধ্বে একটি অমানবিক পাপ যার শাস্তি অনিবার্য।

রংপুর জেলা পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্তসহ প্রয়োজনীয় সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। আদালত আজ যে রায় দিয়েছেন, তা হত্যার মতো নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

খুলনায় জোড়া খুনের মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

রংপুরে মাকে হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৪:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

রংপুরে মাকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে মো. জামিল মিয়া ভেলন (৩২) নামের এক ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এ রায় ঘোষণা করেন।

আসামী জামিল মিয়া রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ (ময়নুদ্দিনটারী) গ্রামের মৃত জামিলা বেগমের একমাত্র ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জামিল মিয়ার স্ত্রী কাকলী খাতুনের সঙ্গে তার মা জামিলা বেগমের পারিবারিক কলহ চলছিল। স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে কাকলী খাতুন বাবার বাড়িতে চলে গেলে জামিল মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হন। পরে ২০২২ সালের ১৯ আগস্ট রাতে খাবার খেয়ে মা-ছেলে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক ১টার দিকে জামিল ঘুম থেকে উঠে তার ঘুমন্ত মাকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

পরে ঘরের মেঝেতে গর্ত খুঁড়ে মায়ের মরদেহ সেখানে পুঁতে রাখেন। প্রতিবেশী-স্বজনদের জানান তার মা কোথায় গিয়েছে তিনি জানেন না। তবে কয়েকদিন পর ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করলে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ঘরের মাটি খুড়ে জামিলা বেগমের মরদেহ খুঁজে পান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. ছামসুল হক বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আফতাব উদ্দিন এবং আসামিপক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. শামীম আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষ মোট ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য–প্রমাণে আসামির দোষ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, সাধারণ মানুষ জানান-একজন মা সন্তানের জীবনের জন্য যে ত্যাগ করেন, সেই সন্তানের হাতে মায়ের মৃত্যু সমাজে সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধের উদাহরণ। এই হত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া বিকল্প কিছু হতে পারে না।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, এই রায়ে মানবিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। আদালত প্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক বিচার দিয়েছেন।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রতিফলিত হলো পরিবারের ভেতরে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকল্প কিছু নেই। নিজের জন্মদাত্রী মায়ের জীবন কেড়ে নেওয়া যে কোনো অপরাধের ঊর্ধ্বে একটি অমানবিক পাপ যার শাস্তি অনিবার্য।

রংপুর জেলা পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্তসহ প্রয়োজনীয় সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। আদালত আজ যে রায় দিয়েছেন, তা হত্যার মতো নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।