জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি :
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে যেন এনসিপির কমিটি থাকে সেই অনুয়ায়ী প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আমরা দিয়েছি। নির্বাচনে এই শক্তিশালী কাঠামো তৈরির পরে আগামী সংসদে কারা যাবে তার নির্ধারকের ভূমিকায় থাকবে এনসিপি।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত দলের জেলা ও উপজেলা কমিটির সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি আগামীর বাংলাদেশে সংসদে সরকার গঠন করবে, সেই জায়গায় এনসিপি নির্ধারকের ভূমিকায় থাকবে। এটা হওয়ার জন্য ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হয় না। যখন গুরুত্বপূর্ণ তিনটা রাজনৈতিক দল থাকবে একটা দেশে। যাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ জনসমর্থন আছে, তখন ওই তিন নম্বর দলটায় এটা নির্ধারণ করার সম্ভবনা বেশি থাকে। এক ও দুই নম্বর দলের ভোট যদি কাছাকাছি থাকে, ওই জায়গায় আরেকটি রাজনৈতিক দল তৃতীয় অবস্থানে থাকে। তারা যে দলের সঙ্গে যৌক্তিকভাবে যায়, সেই দলই সরকার গঠন করে।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশে এনসিপি হয়তো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে সরকারি দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে, অথবা একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবে। আমরা জাতীয় পার্টির মতো ‘পোষা রাজনীতি’ করতে আসেননি।
আগামী সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করে এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদে এনসিপি নির্ধারকের জায়গায় থাকবে। এনসিপি সরকারি দল হিসেবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে, নয়তো শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবে। আমরা জাতীয় পার্টির মতো পোষা বিরোধী দল হিসেবে রাজনীতি করতে আসিনি। বাংলাদেশে যদি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল থাকে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় দলের ভোট যদি কাছাকাছি হয়, তাহলে তৃতীয় দলই নির্ধারণ করে কে সরকার গঠন করবে। এনসিপি সেই তৃতীয় শক্তি হিসেবেই আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, আমরা (এনসিপি) আগামীর বাংলাদেশে সরকারি দল হিসেবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। না হলে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। আমরা জাতীয় পার্টির মতো পোষা বিরোধী দল হওয়ার জন্য রাজনীতিতে আসিনি।
সারজিস আলম বলেন, এনসিপি তাদের জায়গা থেকে আগামীর বাংলাদেশে জনগণের স্বার্থকে সবার আগে প্রাধান্য দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আপনারা এই জুলাই সনদেও তার প্রতিফলন দেখতে পেয়েছেন। জুলাই সনদে জনগণের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন হওয়ার প্রয়োজন ছিল বা কথা। সেই সনদের বাস্তবায়নে যখন আমরা আইনি ভিত্তি দেখিনি, কিভাবে হবে—এর সঠিক ক্লিয়ারেন্স পাইনি, তখন আমাদের জায়গা থেকে জুলাই সনদে দায়সারা স্বাক্ষর করিনি।
তিনি বলেন, আমরা দলীয়ভাবে কিছু চাইনি। যেই বিষয়গুলোতে তারাই ঐক্যমত্য হয়েছে, সেই বিষয়গুলো তারাই জুলাই সনদে এনেছে, সেই বিষয়গুলো বাস্তবায়নে আমরা রোড ম্যাপ চাই, নিশ্চয়তা চাই। আমরা শুধু নির্বাচনে যাবো, কয়েকটি আসন পাবো এটাকে সামনে রেখে আমরা সনদে স্বাক্ষর করতে পারি না। এটা জনগণের আকাঙ্খার বিপরীত।
সভায় দলটির প্রতীক ‘শাপলা’ নিয়ে আইনি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে সারজিস আলম বলেন, আমাদেরকে শাপলা প্রতীক দিতেই হবে। আর যদি না দেওয়া হয়, তবে কেন দেওয়া হবে না- তার আইনগত ব্যাখ্যা দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে আমরা আইনিভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে লড়াই করবেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোট গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা গুম, খুন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি যারা দেবে এবং যারা ‘বাংলাদেশপন্থার রাজনীতি’ করবে, তাদের সঙ্গেই জোট হওয়ার চিন্তা করবেন।
জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে আয়োজিত এই সমন্বয় সভায় এনসিপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন এবং জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়ক ওমর আলী বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।