Dhaka রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার নতুন অধ্যায় : জয়নুল আবদিন ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, জুলাই সনদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্যের এক নতুন অধ্যায়। যা দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় পিআর নামক একটি জনবিচ্ছিন্ন দাবি, গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলমান ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে।

তিনি বলেন, জুলাই সনদের মূল লক্ষ্য একটাই বাংলাদেশে যেন আর কোনো অনির্বাচিত সরকার গঠিত না হয়। কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে। আমি ঐকমত্য কমিশনের সব দাবি সমর্থন করছি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে বাংলাদেশের জনগণই বিজয়ী হবে।

তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানান, আসুন, আমরা ভাই ভাই হয়ে প্রতিজ্ঞা করি— জুলাই সনদে যা লেখা আছে, ইনশাআল্লাহ, যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করব। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার রক্ষাই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রায় ছয় মাসের পরিশ্রমের ফল হিসেবে যে ‘ঐকমত্য কমিশনের দলিল’ বা ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসের উপস্থিতিতে বিএনপি, জামায়াতসহ মোট ৩৬টি রাজনৈতিক দল এ সনদে স্বাক্ষর করেছে। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ।

সাবেক এই চিফ হুইপ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ৫৫ বছর আগে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি এই দেশ স্বাধীন করার জন্য। আজও সেই একই স্পৃহা নিয়ে বলি— আমরা যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং তারেক রহমানের দূরদর্শিতায় বিশ্বাস করি, তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের প্রিয় সহযোদ্ধাদের ত্যাগ কখনো ভুলিনি ইলিয়াস আলী, আলম, হারুনসহ অনেকেই হারিয়ে গেছেন। যারা গতকাল বৃষ্টিতে ভিজে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তারা আমাদের জাতির গর্ব।

তিনি বলেন, যদিও কিছু বিশৃঙ্খলা ঘটেছিল, সেটি দুঃখজনক। আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি আমাদের ঐক্য ভাঙতে পারবে না। যাদের কোনো দাবি ছিল, তারা ইউনূস সাহেবের বাসভবনে গিয়ে আলোচনা করতে পারতেন। আমি বিশ্বাস করি, এই ঐক্য বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আমরা সবাই জানি, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন। সেই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমাদের ঐক্য দরকার— যেন আবার কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার দেশে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে। গত ১৬ বছর ধরে হাসিনা সরকার দেশের গণতন্ত্রকে দমন করেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত, কারাবন্দি, এমনকি হত্যা ও নিখোঁজের শিকার হয়েছে। এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় নির্বাচন, সে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদেরকে সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। জুলাই বিপ্লবের টার্গেট ছিল একটাই, আর তা হলো হাসিনার বিদায়, সে যেন তার বাবার নাম ব্যবহার করে আর কোনদিন রাজনীতি করতে না পারে। সে যেন মুক্তিযুদ্ধকে তার নিজের পকেটের সম্পদ বানাতে না পারে, অনির্বাচিত এমপিদের দ্বারা আর যেন প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্দেশ্য ফারুক বলেন, আমি ঐক্যমত্য কমিশনের সকল দাবিকে স্বাগত জানাই। যারা রাগ করেছেন, তারা একটু আসুন। আপনারা কি মার্কা পাবেন, সেটা নির্বাচন কমিশনে নির্ধারণ করে দেবে, সেটা আমার বিষয় না। কিন্তু মানুষের চোখে আপনারা যে সম্মানটুকু অর্জন করেছেন, তা কলঙ্কিত করবেন না।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মনজুর রহমান ভূইয়া এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন— বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, ফরিদা ইয়াসমিন, তাঁতীদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সাংবাদিক রাশেদুল হক, মৎস্যজীবী দলের নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে সরকার

জুলাই সনদ বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার নতুন অধ্যায় : জয়নুল আবদিন ফারুক

প্রকাশের সময় : ০৪:০৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, জুলাই সনদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্যের এক নতুন অধ্যায়। যা দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় পিআর নামক একটি জনবিচ্ছিন্ন দাবি, গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলমান ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে।

তিনি বলেন, জুলাই সনদের মূল লক্ষ্য একটাই বাংলাদেশে যেন আর কোনো অনির্বাচিত সরকার গঠিত না হয়। কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে। আমি ঐকমত্য কমিশনের সব দাবি সমর্থন করছি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে বাংলাদেশের জনগণই বিজয়ী হবে।

তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানান, আসুন, আমরা ভাই ভাই হয়ে প্রতিজ্ঞা করি— জুলাই সনদে যা লেখা আছে, ইনশাআল্লাহ, যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করব। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার রক্ষাই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রায় ছয় মাসের পরিশ্রমের ফল হিসেবে যে ‘ঐকমত্য কমিশনের দলিল’ বা ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসের উপস্থিতিতে বিএনপি, জামায়াতসহ মোট ৩৬টি রাজনৈতিক দল এ সনদে স্বাক্ষর করেছে। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ।

সাবেক এই চিফ হুইপ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ৫৫ বছর আগে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি এই দেশ স্বাধীন করার জন্য। আজও সেই একই স্পৃহা নিয়ে বলি— আমরা যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং তারেক রহমানের দূরদর্শিতায় বিশ্বাস করি, তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের প্রিয় সহযোদ্ধাদের ত্যাগ কখনো ভুলিনি ইলিয়াস আলী, আলম, হারুনসহ অনেকেই হারিয়ে গেছেন। যারা গতকাল বৃষ্টিতে ভিজে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তারা আমাদের জাতির গর্ব।

তিনি বলেন, যদিও কিছু বিশৃঙ্খলা ঘটেছিল, সেটি দুঃখজনক। আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি আমাদের ঐক্য ভাঙতে পারবে না। যাদের কোনো দাবি ছিল, তারা ইউনূস সাহেবের বাসভবনে গিয়ে আলোচনা করতে পারতেন। আমি বিশ্বাস করি, এই ঐক্য বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আমরা সবাই জানি, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন। সেই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমাদের ঐক্য দরকার— যেন আবার কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার দেশে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে। গত ১৬ বছর ধরে হাসিনা সরকার দেশের গণতন্ত্রকে দমন করেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত, কারাবন্দি, এমনকি হত্যা ও নিখোঁজের শিকার হয়েছে। এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় নির্বাচন, সে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদেরকে সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। জুলাই বিপ্লবের টার্গেট ছিল একটাই, আর তা হলো হাসিনার বিদায়, সে যেন তার বাবার নাম ব্যবহার করে আর কোনদিন রাজনীতি করতে না পারে। সে যেন মুক্তিযুদ্ধকে তার নিজের পকেটের সম্পদ বানাতে না পারে, অনির্বাচিত এমপিদের দ্বারা আর যেন প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্দেশ্য ফারুক বলেন, আমি ঐক্যমত্য কমিশনের সকল দাবিকে স্বাগত জানাই। যারা রাগ করেছেন, তারা একটু আসুন। আপনারা কি মার্কা পাবেন, সেটা নির্বাচন কমিশনে নির্ধারণ করে দেবে, সেটা আমার বিষয় না। কিন্তু মানুষের চোখে আপনারা যে সম্মানটুকু অর্জন করেছেন, তা কলঙ্কিত করবেন না।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মনজুর রহমান ভূইয়া এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন— বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, ফরিদা ইয়াসমিন, তাঁতীদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সাংবাদিক রাশেদুল হক, মৎস্যজীবী দলের নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ।