নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। যেকোনো উপায়েই হোক ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় এসব কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলেও পরবর্তীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদেরকেই এর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি জাতীয় সংসদের ওপর নির্ভর করবে।
তিনি বলেন, আমরা জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যেগুলো রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সকল প্রস্তাবে যদি সবাই একমত হতো, তাহলে আলোচনার প্রয়োজন পড়ত না। আমরা আশা করি ১৭ অক্টোবর জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে এবং সেটি জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে। পরবর্তীতে ঐকমত্য কমিশন সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তাব রাখবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সব অর্গানের মধ্যে যেন ব্যালেন্স থাকে, সেটা আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) চেষ্টা করতে হবে। আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি এফোর্ড করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই আপনার সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। একটা ব্যালেন্সড অবস্থা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনোরকম ঝামেলার মধ্যে যেতে চাই না, যেতে পারব না। সেটা আমরা এফোর্ড করতে পারব না। পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের দোসর একটি দেশ, এই সুযোগ নেওয়ার জন্য বসে থাকবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার মনে হয়েছিল প্রধান উপদেষ্টা আপনি জাতিসংঘের সফরের সময় আখতার হোসেনকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, তারা হয়তো অনেক কিছু বিষয়ে আপনার কাছ থেকে শিক্ষা পাবেন, আশ্বস্ত হবেন এবং আমরাও শেষে আশ্বস্ত হতে পারব। কিন্তু এখন দেখতেছি আমরা সারারাত যা পড়লাম সকালবেলা ওটা আবার রিপিটেশন। সেটা করা আমাদের মনে হয় উচিত হবে না। আমাদের আপনার প্রতিশ্রুত সময়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। যার কোনো বিকল্প নাই। এই জাতির সামনে।
তিনি বলেন, এমন একটা পরিবেশ আমাদের বজায় রাখতে হবে, যে পরিবেশে আমরা কথিত স্বৈরাচারকে আর কখনো এখানে সুযোগ নিতে দেব না। দীর্ঘদিন অনির্বাচিত অবস্থায় একটা সরকার পরিচালিত হলে যে সমস্ত সমস্যা দিয়ে উৎপত্তি হয়, সেটা এখনো হয়েছে। সেজন্য আমরা বারবার তখন থেকেই বলছিলাম যত শিগগিরই সম্ভব নির্বাচিত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার। তা না হলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ সমস্ত অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে যা কিছু দেখা হয়েছে, সেই সমস্ত সিমটম এদেশেও উৎপত্তি হবে এবং হয়েছে। এখন বিলম্বিত হলে আরও বেশি সমস্যার উদ্ভবের সম্ভাবনা বিস্তর।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ প্রণীত হয়েছে। স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষায় আছি। এখানে যে সমস্ত বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়গুলো নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার জন্য তো উপদেষ্টা আপনি ঐকমত্য কমিশনের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যদি এখানে কোনো নোট অব ডিসেন্ট না-ই দেওয়া হতো, কিছু কিছু বিষয় অনৈক্য না-ই হতো তাহলে জাতীয় ঐতমত্য কমিশন থেকে যে সমস্ত প্রস্তাব দেওয়া হতো সবাই একমত হয়ে যেতাম। আর কোনো আলোচনার প্রয়োজন ছিল না। সমস্ত প্রস্তাবে যদি সবাই একমত হতো তাহলে দীর্ঘ ১২ মাস পর্যন্ত আমাদের এই চর্চার প্রয়োজন হতো না।
তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত প্রস্তাব আমার শ্রদ্ধেয় মজুমদার (বদিউল আলম মজুমদার) সাহেব দিয়েছেন, এগুলো সব কিতাবে মানায়, বাস্তবের সঙ্গে সেটার অনেক কিছু মিল ছিল না। যেটা আলোচনায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে যেগুলো সম্ভব, আমাদের কালচারাল স্ট্যাটাসে যেগুলো সম্ভব, আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি যেগুলো সম্ভব, ইভেন জুডিশিয়ারি জাজমেন্ট সেগুলো বিবেচনায় জুডিশিয়ারি জাজমেন্ট দেয়। কারণ এটা ব্রিটিশ নয়,এটা আমেরিকা নয়, এটা বাংলাদেশ। এখানে আমাদের ধর্মীয় কালচারকে বিবেচনায় নিতে হয়। আমাদের সামাজিক কালচারকে বিবেচনা নিতে হয়। আমাদের দীর্ঘদিনের চর্চিত রাজনৈতিক কালচারকে বিবেচনা নিতে হয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কন্টিনিউয়াস সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে। কিন্তু এটা কন্ডিশনাল, আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে। এটা সীমাহীন নয়, আমরা চাই আপনার নেতৃত্বে একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন, এটাই হচ্ছে কন্ডিশন। আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তোরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি। আপনি দয়া করে এটা অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেন, আজকে সচিবালয়ে যে সমস্ত নিয়োগ বদলি পদায়নের জন্য আপনি মন্ত্রিপরিষদ একটা ক্যাবিনেট কমিটি করে দিয়েছেন, এটার কোনো চর্চা নাই। এটা কোনো ট্রেডিশন নয়। এটা কোনো নিয়ম নয়। তারা যা করছে, পদোন্নতি নিয়ম বদলের মধ্যে সেটা ওখানে একটা রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আপনি খোঁজ নেবেন। আমরা খুব অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একদম প্রতি বিপ্লবী হলেও চলবে না, আমাদের বাস্তবতার নিরিখে পদক্ষেপটা নিতে হবে। রাজনৈতিক দলসমূহ যে সমস্ত বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করতে পারবে সেগুলো সংকলিত হয়ে একটা জাতীয় সনদ হবে।
বৈঠকে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।