কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
বহুল আলোচিত কুড়িগ্রাম অন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার এক যুগ পর এবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) চাকরি পেলেন তার আপন ছোট ভাই মো. আরফান হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট ১৫ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম, পিএসসি আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তিনি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দেবেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাট ব্যাটালিয়ন (১৫ বিজিবি) আয়োজিত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আরফান হোসেনকে এ নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।
আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ১৪ বছরের ফেলানী। তার লাশ অন্তত পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। সেই ছবি দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেই থেকে দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়াই করে আসছে ফেলানীর পরিবার।
ফেলানীর ভাই আরফান হোসেন বলেন, মা-বাবার স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য কাজ করব। ফেলানী হত্যার পর মানুষ যে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল বিজিবিতে যোগ দেওয়ার। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। বিজিবিকে ধন্যবাদ জানাই, আমাকে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়ে ফেলানীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। দোকান করে দিয়ে সহায়তা করেছে। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে চাকরির সুযোগ পেল। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।
বিজিবির লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে রয়েছে। ফেলানীর ছোট ভাই নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আগামীকাল শুক্রবার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যোগ দেবেন। আমরা বিশ্বাস করি, প্রশিক্ষণ শেষে তিনি একজন দক্ষ সদস্য হিসেবে দেশের সেবায় নিয়োজিত হবেন।
তিনি বলেন, সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি 




















