Dhaka বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উপরে ‘সিঙ্গাপুর’ নিচে আবদুল্লাহপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আবদুল্লাহপুরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) মসৃণ উড়ালসড়কটি অনেকটা সিঙ্গাপুরের সড়কে চলার আমেজ দেয়। কিন্তু উড়ালসড়কের নিচের চেহারা বীভৎস; খানাখন্দে ভরা, হেলেদুলে চলে যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয় চালক-যাত্রীদের। ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকেই বললেন, ‘ওপরে সিঙ্গাপুর হলেও নিচে সেই আবদুল্লাহপুরই রয়ে গেছে।’

দেখা গেছে, মহাসড়কের এই অংশে চারটি লেনের সব কটিই বেহাল। আবদুল্লাহপুরের পলওয়েল মার্কেট থেকে মোড় হয়ে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের হোয়াইট প্যালেস হোটেল পর্যন্ত পুরো সড়কেই খানাখন্দ, ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে জমে থাকে পানি। চার লেনের মধ্যে একটি দিয়ে কোনো রকমে ধীরগতিতে সারি ধরে চলে যানবাহন। গর্তে কোনো যান আটকে গেলে, বেশি ভাঙা অংশ দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যানগুলোকে চলাচল করতে হয়।

টঙ্গী ব্রিজ থেকে পলওয়েল মার্কেট পর্যন্ত সড়কের অবস্থাও করুণ। চারটি লেনের তিনটিই ভাঙাচোরা। একদম বাঁ পাশের লেনে দীর্ঘ সারিতে যানগুলোকে চলতে হয়। ওই অংশের কিছুটা বেশির ভাগ সময় থাকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলে।

আবদুল্লাহপুর দিয়ে চলাচলকারী মানুষ ও এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তা সুন্দর থাকলেও রাজধানীর উত্তরার মতো জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের এমন দশা অকল্পনীয়। ১ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা লেগে যায়। যানবাহন হেলেদুলে চলে। হেঁটে চলার উপায় নেই কাদাপানি আর খানাখন্দের কারণে।

ব্যবসায়ীরা বললেন, চলাচল দুর্ভোগের কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ আবদুল্লাহপুরে আসে না। তাই এখানকার মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুব খারাপ।

আবদুল্লাহপুরে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় খানাখন্দ। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেও পানি জমে থাকে কয়েক দিন। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে। গর্তে পড়ে যান আটকে যাওয়া প্রতিদিনের ঘটনা। কোনো যান আটকে পড়লে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। তাই গর্তে আটকে পড়া যান সরাতে আবদুল্লাহপুরে একটি রেকার সব সময় রাখতে হয়। পণ্যসহ ভারী যান আটকে পড়লে সেটি উদ্ধার করতে গিয়ে রেকারের ক্ষতি হয়।

টঙ্গী বাজার ও উত্তরার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, টঙ্গীর বেইলি ব্রিজ দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে। আবার আবদুল্লাহপুরে সড়কের দুরবস্থা। এতে ট্রাকে পণ্য পরিবহনে প্রায়ই দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে টঙ্গীর মিলগেটে বড় লরিতে পোশাক কারখানার মালপত্র নেওয়ার পথে আবদুল্লাহপুরে গর্তে পড়ে লরি নষ্ট হয়ে যায়। রেকারও সরাতে পারেনি। লরিটির চালক মাসুদ বলেন, যে টাকা ভাড়ায় মালপত্র নিয়ে আসেন, তার দ্বিগুণ যাবে লরি মেরামতে। লরির পণ্য পরে অন্য লরিতে তুলে পাঠাতে হয়েছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের আবদুল্লাহপুর বক্সের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (শহর ও যানবাহন) মো. ইউনুছ মিয়া আখন্দ বলেন, আবদুল্লাহপুর দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৭টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। সুয়্যারেজ লাইন না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এই অংশে এক দিনের বৃষ্টির পানি জমে থাকে কয়েক দিন। জমে থাকা পানির কারণে সৃষ্টি হয় খানাখন্দ। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে রাস্তাটির দুর্দশা থাকলেও বিআরটি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্ণপাত নেই।

এ বিষয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) উপসচিব মোহাম্মদ নুরুল আমিন খান বলেন, রাস্তার বিষয়টি সড়ক ও জনপথ এবং সেতু বিভাগ কর্তৃপক্ষ দেখবে। সেটির দায়িত্ব আমাদের নয়।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফ উদ্দিন বলেন, রাস্তার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ গত মাসে একটি সভা করেছিল। সেখানে উপদেষ্টাও ছিলেন। এ বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর তাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই তারা বিকল্প চিন্তাভাবনা করছেন। তারা সড়কটি মেরামতের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় সেতু বিভাগে পাঠিয়েছেন। সেতু বিভাগ অর্থ বিভাগে দেওয়ার পর বরাদ্দ দিলে তখন তারা স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারবেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উপরে ‘সিঙ্গাপুর’ নিচে আবদুল্লাহপুর

প্রকাশের সময় : ০২:০৩:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আবদুল্লাহপুরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) মসৃণ উড়ালসড়কটি অনেকটা সিঙ্গাপুরের সড়কে চলার আমেজ দেয়। কিন্তু উড়ালসড়কের নিচের চেহারা বীভৎস; খানাখন্দে ভরা, হেলেদুলে চলে যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয় চালক-যাত্রীদের। ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকেই বললেন, ‘ওপরে সিঙ্গাপুর হলেও নিচে সেই আবদুল্লাহপুরই রয়ে গেছে।’

দেখা গেছে, মহাসড়কের এই অংশে চারটি লেনের সব কটিই বেহাল। আবদুল্লাহপুরের পলওয়েল মার্কেট থেকে মোড় হয়ে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের হোয়াইট প্যালেস হোটেল পর্যন্ত পুরো সড়কেই খানাখন্দ, ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে জমে থাকে পানি। চার লেনের মধ্যে একটি দিয়ে কোনো রকমে ধীরগতিতে সারি ধরে চলে যানবাহন। গর্তে কোনো যান আটকে গেলে, বেশি ভাঙা অংশ দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যানগুলোকে চলাচল করতে হয়।

টঙ্গী ব্রিজ থেকে পলওয়েল মার্কেট পর্যন্ত সড়কের অবস্থাও করুণ। চারটি লেনের তিনটিই ভাঙাচোরা। একদম বাঁ পাশের লেনে দীর্ঘ সারিতে যানগুলোকে চলতে হয়। ওই অংশের কিছুটা বেশির ভাগ সময় থাকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলে।

আবদুল্লাহপুর দিয়ে চলাচলকারী মানুষ ও এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তা সুন্দর থাকলেও রাজধানীর উত্তরার মতো জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের এমন দশা অকল্পনীয়। ১ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা লেগে যায়। যানবাহন হেলেদুলে চলে। হেঁটে চলার উপায় নেই কাদাপানি আর খানাখন্দের কারণে।

ব্যবসায়ীরা বললেন, চলাচল দুর্ভোগের কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ আবদুল্লাহপুরে আসে না। তাই এখানকার মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুব খারাপ।

আবদুল্লাহপুরে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় খানাখন্দ। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেও পানি জমে থাকে কয়েক দিন। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে। গর্তে পড়ে যান আটকে যাওয়া প্রতিদিনের ঘটনা। কোনো যান আটকে পড়লে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। তাই গর্তে আটকে পড়া যান সরাতে আবদুল্লাহপুরে একটি রেকার সব সময় রাখতে হয়। পণ্যসহ ভারী যান আটকে পড়লে সেটি উদ্ধার করতে গিয়ে রেকারের ক্ষতি হয়।

টঙ্গী বাজার ও উত্তরার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, টঙ্গীর বেইলি ব্রিজ দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে। আবার আবদুল্লাহপুরে সড়কের দুরবস্থা। এতে ট্রাকে পণ্য পরিবহনে প্রায়ই দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে টঙ্গীর মিলগেটে বড় লরিতে পোশাক কারখানার মালপত্র নেওয়ার পথে আবদুল্লাহপুরে গর্তে পড়ে লরি নষ্ট হয়ে যায়। রেকারও সরাতে পারেনি। লরিটির চালক মাসুদ বলেন, যে টাকা ভাড়ায় মালপত্র নিয়ে আসেন, তার দ্বিগুণ যাবে লরি মেরামতে। লরির পণ্য পরে অন্য লরিতে তুলে পাঠাতে হয়েছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের আবদুল্লাহপুর বক্সের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (শহর ও যানবাহন) মো. ইউনুছ মিয়া আখন্দ বলেন, আবদুল্লাহপুর দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৭টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। সুয়্যারেজ লাইন না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এই অংশে এক দিনের বৃষ্টির পানি জমে থাকে কয়েক দিন। জমে থাকা পানির কারণে সৃষ্টি হয় খানাখন্দ। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে রাস্তাটির দুর্দশা থাকলেও বিআরটি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্ণপাত নেই।

এ বিষয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) উপসচিব মোহাম্মদ নুরুল আমিন খান বলেন, রাস্তার বিষয়টি সড়ক ও জনপথ এবং সেতু বিভাগ কর্তৃপক্ষ দেখবে। সেটির দায়িত্ব আমাদের নয়।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফ উদ্দিন বলেন, রাস্তার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ গত মাসে একটি সভা করেছিল। সেখানে উপদেষ্টাও ছিলেন। এ বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর তাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই তারা বিকল্প চিন্তাভাবনা করছেন। তারা সড়কটি মেরামতের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় সেতু বিভাগে পাঠিয়েছেন। সেতু বিভাগ অর্থ বিভাগে দেওয়ার পর বরাদ্দ দিলে তখন তারা স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারবেন।