রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত আছে।
শনিবার (৮ আগস্ট) সকালে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রংপুর অঞ্চল ও রংপুর অঞ্চলের সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, বিগত সময়ে যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিল, তাদের যথা সম্ভব বাদ দিয়ে নতুন লোক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যোগ করা হবে। জাতির কাছে দেয়া প্রধান উপদেষ্টার সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই কাজ করছে ইসি। এরইমধ্যে নির্বাচন প্রচারণায় এআই’র ব্যবহার মোকাবেলাতেও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া, ভোটের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার দু’মাস আগেই তফসিল ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, যখন একটা দেশে রাষ্ট্র সরকার দল এক হয়ে যায়; তখন সবকিছু একসঙ্গে ধসে পরে। নির্বাচন সিস্টেমের উপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে; মানুষকে কেন্দ্র নিয়ে আসা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা মোকাবিলায় কমিশন কাজ করছে।
নাসির উদ্দিন আরো বলেন, গত নির্বাচনে যেসব প্রিজাডিং অফিসার সমস্যা তৈরি করেছে; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে নির্বাচন কমিশন।
নিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে কারো পক্ষে ও বিপক্ষে কাজ করবে না; ১৮ কোটি মানুষের হয়ে কাজ করবে। ভোট দেয়া যেমন নাগরিক দ্বায়ীত্ব; তেমন ঈমানী দ্বায়ীত্বও বটে।
তিনি বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুন্দর ভাবে পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও প্রশাসন মিলে যে একটা ভালো নির্বাচন করা সম্ভব এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তাই আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করাটাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনের হুঁশ থাকা পর্যন্ত সকল কার্যক্রম একেবারেই সোজা থাকবে বিধিবিধান বা আইন কানুন ছাড়া এটা বাঁকা হবে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নত হোক। যাতে করে শান্তিপূর্ণ ও নির্ভয়ে মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ভুলে গেছে। নির্বাচনের দিন অনেক মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায় না, বাসায় আরাম আয়েস করে। অনেকেই মনে করে, ভোট দিতে গিয়ে কি হবে। কেউ না কেউ তো আমার ভোটটা দিয়ে দিবে। এই রকম মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এই মানসিকতা দূর করাই নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। এজন্য সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। আর এই সচেতনতা তৈরীতে সাংবাদিকদের ভুমিকা রয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাই। পরামর্শ চাই।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, অস্ত্রের চেয়ে এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এআই এর ব্যবহার। এআই হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার। এটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। সাংবাদিকরা আমাদের পক্ষ। যারা প্রফেশনাল সাংবাদিক তারা আমাদের হয়ে কাজ করবেন, স্বচ্ছ ইলেকশনের জন্য কাজ করবে এই প্রত্যাশা আমাদের আছে। কিন্তু যারা ফেসবুক দিয়ে সাংবাদিকতা করে, যাদের কোনো ট্রেনিং নাই, কোনো দক্ষতা নেই। কোনো এথিকস নাই। তাদের নিয়ে আমাদের সমস্যা। কেননা তারা প্রধান উপদেষ্টা ও আমাকে নিয়ে নানা ধরনের ভিডিও বানিয়ে একটা লিখে দিয়ে ছেড়ে দেয়। অনেক মানুষ এসব বোঝে না। রাতে শুয়ে শুয়ে এসব ভিডিও দেখে। এগুলো কেউ যাচাই বাছাই করে না। আর্টিফিসিয়াল ভিডিও দেখে আর আমাদের ভুল বোঝে। তাই সবার কাছে অনুরোধ এগুলো যাছাই বাছাই ছাড়া কেউ শেয়ার করবেন না। এই বিষয়ে সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা দরকার। কেননা এটা আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বন্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, অতীতে যে সব প্রিজাইডিং এবং প্রশাসনের লোকজন নির্বাচনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো তাদেরকে আগামী নির্বাচনে না রাখার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রংপুরের মাঠ প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কমকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে তিন দিনের জন্য রংপুর এসেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।