নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপি দেশে সংস্কার করে আসছে বলে মন্তব্য করে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালনে বিএনপি বদ্ধপরিকর। শুধু ঢাকায় নয়, দলের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে ৩১ দফা নিয়ে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় এবং দিনাজপুর জেলা বিএনপির কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ৩১ দফার নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন বিএনপির প্রশিক্ষণ সেলের নেতারা।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিএনপি দেশ সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিল। গণতন্ত্রের মতপার্থক্য থাকাই স্বাভাবিক, রাজনৈতিক দলের বিভেদের কারণে গণতন্ত্র আবারও বাধাগ্রস্ত হোক, এটা আর চাই না। যে কোন মূল্যে দেশে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, জনমানুষের চাওয়ার সঙ্গে একটি মহলের চাওয়ার পার্থক্য রয়েছে। আমরা চাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হলে সবকিছু বাধাগ্রস্ত হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ভোট যদি আপনার পক্ষে আনতে হয়, তবে জনগণের কাছে যেতে হবে। যে কোনো মূল্যে জনগণের সঙ্গে থাকার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি এবং তার প্রতিটি নেতাকর্মী আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে মানুষের ভোটের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা যে সংগ্রামে রাজপথে নেমে এসেছিলাম, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। যেই সংগ্রামের জন্য আমাদের বহু নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে। বহু নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তাদের এই বলিদানকে কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে যুদ্ধ না হলে শিশু হত্যা হয় না। কিন্তু জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আমরা দেখেছি সেই পলাতক স্বৈরাচারের নির্বিচার অত্যাচারের কারণে এই দেশে প্রায় ১০০ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এই শিশুদের কোনো অপরাধ ছিল না। এই শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এই শিশুদের বলিদান কেন, শুধুমাত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সংস্কার শুরু করেছে শহীদ জিয়ার আমল থেকেই। আমরা যখন সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি তখন স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দিয়েছি। আর এখন যারা দিচ্ছেন, আপনারাই তা বিচার করবেন। আমরা যা দিয়েছি, তা পূরণ করে ছাড়ব। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, আমরা শুধু ৩১ দফা দিয়েই থেমে থাকিনি, মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। নেতাকর্মীদের মাধ্যমেই তা পৌঁছে দিতে হবে। দেশের ৭০ ভাগ ভালো কাজ বিএনপি করেছে। সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশের সমস্যা নিয়েই কর্মশালায় বেশি প্রশ্ন পেয়েছি। জনগণ জানে দেশের ভালো কিছু করতে পারলে বিএনপিই করতে পারবে। এই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে বিএনপিকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, জনমানুষের চাওয়ার সঙ্গে একটি মহলের চাওয়ার পার্থক্য রয়েছে। আমরা চাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হলে সব কিছু বাধাগ্রস্ত হবে। যেকোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ভোট যদি আপনার পক্ষে আনতে হয়, তবে জনগণের কাছে যেতে হবে। যে কোনো মূল্যে জনগণের সঙ্গে থাকার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ওপর জনগণ আস্থা রাখে। তারা মনে করে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব হলে তা বিএনপি পারবে। তাই আমি বলছি, জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। জনগণ ছাড়া আমাদের উপাই নেই। আপনারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। রাজপথে মিছিল, মিটিং, সংগ্রাম করেছেন। এবার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে দেশ গঠনের জন্য।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতৃত্ব ছিল, তরুণ সহকর্মী ছিলেন, তাদের অনেকেই আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে বয়স পার হয়ে গেছে। এটার ভুক্তভোগী শুধু ছাত্রদল নয়, এর বাইরে অনেক মানুষ আছেন। যারা স্বৈরাচারের রাজনীতি সমর্থন করতেন না। কিন্তু সরকারের পক্ষে না থাকায় তাদেরও চাকরি খেয়েছে বা চাকরি দেয়নি। এ বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানোই হবে লক্ষ্য। নারীদের ফ্রি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে অনুকরণীয় হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিএনপির আমলে নারীদের আসন বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই ধারায় নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চলছে। এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। কেননা বিএনপির বিরুদ্ধে একটা অদৃশ্য প্রতিপক্ষ ধীরে ধীরে দৃশ্যমানের দিকে যাচ্ছে, সঙ্গে আরও কিছু প্রতিপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। সেটা মোকাবিলা করার সক্ষমতা রয়েছে বিএনপির। এজন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকতে হবে।