নিজস্ব প্রতিবেদক :
বৈষম্যবিরোধী ন্যায়বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি ন্যায়বিচার পাচ্ছে না বলে দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে এর প্রতিবাদ করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছে, সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। এই অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। আমরা রাজপথে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করব।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়ে সক্রিয় ছিল। আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়ায় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেছে।
জিএম কাদের বলেন, গত ১ জুলাই ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে আমি ৩ জুলাই সংসদে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সামনে ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বক্তৃতা করেছি। বক্তৃতায় আমি বলেছি, ছাত্রদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থী। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ৬ জুলাই গাজীপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে বক্তৃতায় আমি বলেছি, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। তখন আমি বলেছিলাম, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে বৈষম্য।
জুলাইয়ে আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করা হলে মুক্তির দাবি তোলার কথা জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি আমরা। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি আমি। শহীদ আবু সাঈদের শোকার্ত মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিয়েছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
‘এটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্বপ্ন বিরোধী। বৈষম্যবিরোধী ন্যায়বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। আমাদের নামে মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে রংপুর থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রংপুরের মানুষ রাস্তায় জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ফাঁসি থেকে রক্ষা করেছে। আমার জন্যও তারা রাজপথে লড়াই শুরু করেছে। আমরা তাদের ঋণ কখনোই শোধ করতে পারব না। আমরা অপরাধ করিনি, আমাদের অপরাধী করার অপচেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আমাদের ব্র্যান্ডিং করার অপচেষ্টা চলছে।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যেতে জাতীয় পার্টিকে বাধ্য করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমসহ সবার সামনে পরিষ্কার করে বলেছি, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি, আমাদের জোর করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছে জাতীয় পার্টি। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আবার, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ ও মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার কারণে কাউকে স্বৈরাচারের দোসর বলা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিএনপিসহ সকল দলই অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা চার বছর সংসদে ভূমিকা রেখেছেন। আমরা মন্ত্রী বা এমপি হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। জনগণের পক্ষে কাজ করাই আমাদের রাজনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য।
প্রেসিডিয়াম সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ,হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এ টি ইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ দিদার বখত, নাজমা আক্তার, আলমগীর সিকদার লোটন, মো. এমরান হোসেন মিয়া, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল আলম রুবেল, শেরীফা কাদের, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আরিফুর রহমান খান, মো. আশরাফুজ্জামান আশু, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু ও এস এম ইয়াসির।