আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছে। এ হামলায় অনেকেই আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সিরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে ফিলিস্তিনের বাইরে সর্বশেষ এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, রাজধানী দামেস্কের কাফর সুসা এলাকা লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
সামরিক বাহিনী ও সানা’র বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, বুধবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে দামেস্কের কাফর সুসা জেলার একটি আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাটের একটি ব্লকে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। এতে দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। তবে এমন হামলা নিয়ে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করেনি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ হামলায় ভবনের নিচে পার্ক করা বেশ কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আক্রান্ত ভবনটির আশপাশে আবাসিক ভবন, স্কুল এবং ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে। ভবনটি ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ব্যবহার করা একটি বিশাল সুরক্ষিত কমপ্লেক্সের কাছে অবস্থিত।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক আলোকচিত্রী জানান, বোমার আঘাতে দামেস্কের নয়তলা ভবনের বাইরের অংশ আংশিক কালো হয়ে গেছে, চতুর্থ তলার আশপাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আশপাশের গাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় সাধারণের প্রবেশ বন্ধ রেখেছে এবং দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
সিরিয়ার রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকা কাফর সুসায় ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা, নিরাপত্তা শাখা, গোয়েন্দা সদর দপ্তর এবং ইরানের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এর উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশের ওপর শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে। প্রধানত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর পাশাপাশি সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অবস্থানসহ ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা করে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ হামলা বেড়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ওয়ার মনিটর জানায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি দামেস্কের কাছে একটি অভিজাত এলাকায় একটি ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর একদিন আগে, দামেস্কের পশ্চিমে সামরিক বিমানবন্দরের কাছে এক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় বলে জানায় অবজারভেটরি। অন্যদিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির দিক থেকে ড্রোন সিরিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করছে বলে জানায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে অবজারভেটরি জানায়, সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় হোমস শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাত বেসামরিক নাগরিকসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। এতে বলা হয়, হামলায় শহরের সবচেয়ে অভিজাত জেলাগুলোর একটিতে অবস্থিত একটি ভবন পুরোপুরি মাটিতে মিশে গেছে এবং ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত করা হয়েছে।
বিচ্ছিন্ন হামলার বিষয়ে সাধারণত ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করে না। তবে দেশটি বারবারই বলে এসেছে, তারা সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতি বাড়তে দেবে না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের সরকার এবং লেবাননের শক্তিশালী হামাস মিত্র হিজবুল্লাহকে সমর্থন এ সহযোগিতা দেয় ইরান।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি জানান, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর ৫০ টির বেশি এবং লেবাননে ৩ হাজার ৪০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।