Dhaka রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের অবমাননা করায় ৫০ বছর কারাদণ্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের সমালোচনা করায় বৃহস্পতিবার দেশটির এক নাগরিককে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ব্যাংককের কঠোর রাজপরিবার অবমাননা আইনে এ যাবতকালের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের সাজা। দেশটির একটি লিগ্যাল রাইট গ্রুপ এ কথা জানিয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত মংকোল থিরাকোট নামে এই ব্যক্তি একজন অনলাইন পোশাক বিক্রেতা।

খবরে বলা হয়, গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে থাইল্যান্ড এ বিতর্কিত আইনের ব্যবহার বাড়ানোর মধ্যে এ মামলার বেশ কয়েক বছর পর রেকর্ড ভঙ্গ করা এ সাজা দেওয়া হলো। সমালোচকরা বলেন, এটি ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়ার একটি কৌশল।

আদালত সূত্র জানায়, থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই নগরীর একটি আপিল আদালত ৩০ বছর বয়সি মংকোল থিরাকোটকে ৫০ বছরের এ সাজা দেন। গণতন্ত্রপন্থি সাবেক এই কর্মী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে রাজপরিবার অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার দায়ে তাকে এ সাজা দেওয়া হয়।

ফেসবুকে রাজতন্ত্রের সমালোচনা করে পোস্ট দেওয়ায় বিচারিক আদালত প্রথমে তাকে ২৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তিনি আরও ১১টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন। পরে আপিল আদালত তাকে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেন। রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে ২০২১ সালে তাকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

দেশটির কঠোর ‘লেস-ম্যাজেস্ট’ আইনে কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া সবচেয়ে দীর্ঘ কারাদণ্ড এটি। রাজতন্ত্র সম্পর্কে যেকোনো নেতিবাচক মন্তব্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে লেস ম্যাজেস্ট আইন। এর আগে ২০২১ সালে এই আইনে ৪৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এক নারীকে।

গত ডিসেম্বর মাসে থাইল্যান্ডের একজন নারী সংসদ সদস্যকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও তিনি দোষী নন বলে দাবি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ করা পোস্টে রাজাকে অপমান করা হয়েছে বলে রুকচানোক আইসকে বুধবার দোষী সাব্যস্ত করেছে ব্যাংককের একটি আদালত। তিনি দুটি পোস্ট করেছিলেন। প্রথম পোস্টে তিনি দেশটিতে মহামারি মোকাবিলায় সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। দ্বিতীয়টি একটি টুইটের পুনঃপোস্ট ছিল যা রাজতন্ত্রের সমালোচনা হিসেবে সাজা দেওয়া হয়। যদিও দুটি পোস্টই তিনি করেছিলেন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগে।

মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি চলতি বছরের নির্বাচনে জয়ী হয়। দলটি ‘লেস-ম্যাজেস্ট’ আইন সংস্কারেরও আহ্বান জানিয়েছিল। ‘লেস-ম্যাজেস্ট’ আইনের বিরোধিতা ছিল এমন একটি ঘটনা যা ২০২০ সালে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। বিক্ষোভ বেশ কয়েক মাস স্থায়ী ছিল। থাই লইয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, ২০২০ সাল থেকে লেস-ম্যাজেস্ট আইনের অধীনে প্রায় ২৬০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিক্ষোভে জড়িত থাকার জন্য প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন আইনের অধীনে বিচার করা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে ২৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে একটি রাজকীয় মোটর বহরের পাশে চিৎকার করার জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

মে মাসের সাধারণ নির্বাচনে তরুণ মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির তরুণ প্রার্থীরা নাটকীয় বিজয় অর্জন করেন। রুকচানোক আইস ব্যাংককের কাছের এলাকা ব্যাং বন থেকে জিতেছিলেন। এ আসনটি কয়েক দশক ধরে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলোর দখলে ছিল। একজন রাজনৈতিক হেভিওয়েট নেতাকে পরাজিত করে আসনটিতে বিজয়ী হওয়ার জন্য থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম তাকে ‘জায়ান্ট-কিলার’ নাম দিয়েছিল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

জোর করে চাপিয়ে দেয়া শিক্ষা সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয় : হাসনাত আব্দুল্লাহ

থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের অবমাননা করায় ৫০ বছর কারাদণ্ড

প্রকাশের সময় : ০৭:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের সমালোচনা করায় বৃহস্পতিবার দেশটির এক নাগরিককে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ব্যাংককের কঠোর রাজপরিবার অবমাননা আইনে এ যাবতকালের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের সাজা। দেশটির একটি লিগ্যাল রাইট গ্রুপ এ কথা জানিয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত মংকোল থিরাকোট নামে এই ব্যক্তি একজন অনলাইন পোশাক বিক্রেতা।

খবরে বলা হয়, গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে থাইল্যান্ড এ বিতর্কিত আইনের ব্যবহার বাড়ানোর মধ্যে এ মামলার বেশ কয়েক বছর পর রেকর্ড ভঙ্গ করা এ সাজা দেওয়া হলো। সমালোচকরা বলেন, এটি ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়ার একটি কৌশল।

আদালত সূত্র জানায়, থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই নগরীর একটি আপিল আদালত ৩০ বছর বয়সি মংকোল থিরাকোটকে ৫০ বছরের এ সাজা দেন। গণতন্ত্রপন্থি সাবেক এই কর্মী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে রাজপরিবার অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার দায়ে তাকে এ সাজা দেওয়া হয়।

ফেসবুকে রাজতন্ত্রের সমালোচনা করে পোস্ট দেওয়ায় বিচারিক আদালত প্রথমে তাকে ২৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তিনি আরও ১১টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন। পরে আপিল আদালত তাকে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেন। রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে ২০২১ সালে তাকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

দেশটির কঠোর ‘লেস-ম্যাজেস্ট’ আইনে কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া সবচেয়ে দীর্ঘ কারাদণ্ড এটি। রাজতন্ত্র সম্পর্কে যেকোনো নেতিবাচক মন্তব্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে লেস ম্যাজেস্ট আইন। এর আগে ২০২১ সালে এই আইনে ৪৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এক নারীকে।

গত ডিসেম্বর মাসে থাইল্যান্ডের একজন নারী সংসদ সদস্যকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও তিনি দোষী নন বলে দাবি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ করা পোস্টে রাজাকে অপমান করা হয়েছে বলে রুকচানোক আইসকে বুধবার দোষী সাব্যস্ত করেছে ব্যাংককের একটি আদালত। তিনি দুটি পোস্ট করেছিলেন। প্রথম পোস্টে তিনি দেশটিতে মহামারি মোকাবিলায় সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। দ্বিতীয়টি একটি টুইটের পুনঃপোস্ট ছিল যা রাজতন্ত্রের সমালোচনা হিসেবে সাজা দেওয়া হয়। যদিও দুটি পোস্টই তিনি করেছিলেন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগে।

মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি চলতি বছরের নির্বাচনে জয়ী হয়। দলটি ‘লেস-ম্যাজেস্ট’ আইন সংস্কারেরও আহ্বান জানিয়েছিল। ‘লেস-ম্যাজেস্ট’ আইনের বিরোধিতা ছিল এমন একটি ঘটনা যা ২০২০ সালে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। বিক্ষোভ বেশ কয়েক মাস স্থায়ী ছিল। থাই লইয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, ২০২০ সাল থেকে লেস-ম্যাজেস্ট আইনের অধীনে প্রায় ২৬০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিক্ষোভে জড়িত থাকার জন্য প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন আইনের অধীনে বিচার করা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে ২৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে একটি রাজকীয় মোটর বহরের পাশে চিৎকার করার জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

মে মাসের সাধারণ নির্বাচনে তরুণ মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির তরুণ প্রার্থীরা নাটকীয় বিজয় অর্জন করেন। রুকচানোক আইস ব্যাংককের কাছের এলাকা ব্যাং বন থেকে জিতেছিলেন। এ আসনটি কয়েক দশক ধরে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলোর দখলে ছিল। একজন রাজনৈতিক হেভিওয়েট নেতাকে পরাজিত করে আসনটিতে বিজয়ী হওয়ার জন্য থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম তাকে ‘জায়ান্ট-কিলার’ নাম দিয়েছিল।