নিজস্ব প্রতিবেদক :
১৫ আগস্ট জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা। সেদিন ঘাতকের বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। ইতিহাসে এই ধরনের জঘন্য ঘটনা বাংলার মাটিতে ঘটে যায়। এটি সেই কারবালার ঘটনাকেও হার মানায়। কারবালার ঘটনা শিশু-নারীদের হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট শিশু-নারীদেরও তারা ছাড়েনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারবে না ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন। হত্যার দিনকে যারা উৎসবের দিন বানালো তাদের কাছে মানবাধিকারে কথা দুর্ভাগ্যজনক।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ফেলে। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ করে। জয়বাংলা স্লোগান বাদ দিয়ে জিন্দাবাদ স্লোগান নিয়ে আসে। ইতিহাসি বিকৃতি করে। বাংলাদেশের মানুষের উন্নতির সব স্বপ্ন বন্ধ হয়ে যায়। যারা আমাদের বাড়িতে উঠাবসা করেছে, খাওয়া-দাওয়া করেছে তারাই বেঈমানি করেছে- এতে কোনও সন্দেহ নেই খুনি মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলো, জিয়াকে সেনাপ্রাধান বানালো। জিয়াউর রহমান এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মীর জাফর যেমন তিন মাসের বেশি থাকতে পারেনি। তেমনি মোশতাকও থাকতে পারেনি। জিয়া ক্ষমতা দখল করে। উর্দি পরে ক্ষমতারোহণ এবং পরে নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করারও চেষ্টা করে। আর্মি রুলস ভঙ্গ করে একটা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও করে। ভোট কারচুপি ও ভোটচুরি তো সেখান থেকে শুরু। এরপর বিএনপি নামক সেই দল করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ৩১ জুলাই আমরা সেখানে পৌঁছাই। আমরা ভাবতেও পারিনি আমাদের জীবনে এমন একটা আঘাত অপেক্ষা করছে। ১৩ তারিখও মা-বাবার সাথে কথা হয়। আমার আপনজন হারিয়েছি, স্বজন হারিয়েছি, বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমারও তো হারিয়েছি, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বাংলাদেশে কী হারিয়েছিল? বাংলাদেশের মানুষ কী হারিয়েছিল? বাবা সারাজীবন এদেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এদেশের মানুষকে সুখী জীবন দেবেন, তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা দিয়ে উন্নত জীবন দেবেন বলে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে দেশকে উন্নত দেশের দিয়ে ধাবিত করেন, ঠিক এই সময়ে আঘাতটা আসে। খুনিরা জাতির পিতাকে হত্যা করার পর এদেশের নামই পরিবর্তন করে ফেলে।
তিনি বলেন, যে স্লোগান দিয়ে লাখো শহিদ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, সেই জয় বাংলা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান জিন্দাবাদ কথা ফিরিয়ে আনে। পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, ৭ মার্চের ইতিহাস বিকৃতি করে।
শেখ হাসিনা কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, গণতন্ত্রের নাম করে ভারত মহাসাগর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশকে আক্রমণ করাই কারো কারো উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্যে তারা কাজ করছে। ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত ও প্রশান্ত মহাসারগরের এ অঞ্চলের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমাদের বঙ্গোপসাগরটাও এরই অংশ। ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে এখানে কারো সাথে কারো দ্বন্দ্ব নাই। স্বাধীনভাবে পণ্য চলাচল করে এখানে।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু লোক আছে তারা এদের সঙ্গে সুর মিলায়। তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশকেও সচেতন থাকতে হবে। আমি মনে করি তারা সচেতন। এ এলাকা নিয়ে নানা ধরণের চক্রান্ত চলছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আমি তাদের বলতে চাই- আপনাদের গণতন্ত্র কি আটলান্টিকে আটকে যায়? আটলান্টিক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ? যে বিএনপি আমার বাবাসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে আজ তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসাতে হবে? এদের উদ্দেশ্য নির্বাচন না, গণতন্ত্র না। এরা একটা জিনিসই করতে চায় তা হচ্ছে আমরা যে গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করেছি, আর্থসামাজিক উন্নতি করেছি, দারিদ্রতার হার কমিয়ে নিয়ে এনেছি, মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি সেই উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। এটাই বাস্তবতা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, হঠাৎ কেন জানি তাদের আগ্রহ বেড়ে গেলো। কারণটা কী? একের পর এক তারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। বিএনপি তাদের এখন চোখের মনি। যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, ক্ষমতায় এসে হত্যা, নির্যাতন শুরু করেছে, তাদের সঙ্গে না কি বসতে হবে। কথা বলতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য আর বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক কিছু সহ্য করেছি। আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। অথচ খালেদা জিয়া আজিজ মার্কা নির্বাচন যখন করেছে তখন তাদের উদ্বেগ দেখিনি। আসলে বাংলাদেশের উন্নয়ন তাদের পছন্দ না।
সরকারপ্রধান বলেন, যেসব দেশ খুনীদের আশ্রয় দিয়েছে তারা যখন আমাদের মানবতার কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যখন বাংলাদেশে হত্যা, খুন, গুম, নির্যাতন, নিপীড়ন শুরু হয় তখন তারা কোথায় ছিল? ২০০১ সালের নির্বাচনেতো আমাদের হারার কথা ছিল না। এরশাদ যখন নির্বাচনের ফল আটকিয়ে রেখেছিল তখনতো এদের উদ্বেগ দেখিনি।
তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় আমি ক্ষমতায় আসার পর শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানেও এখন পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। তাদের পদলেহনকারীদের নিয়ে খেলবে। দেশবাসীকে বলবো দেশপ্রেমিক সব নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখি না। ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় আসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার বাবাও দেশের স্বার্থ নষ্ট করে ক্ষমতায় থাকতে চাননি, আমিও দেশের স্বার্থ নষ্ট করে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। আজকে দেশের উন্নয়ন যখন করে যাচ্ছি তখন সবার মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো খেলা খেলে বাংলাদেশের ভাগ্য নষ্ট করা যাবে না। দোয়া করবেন যেন জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারি।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল আওয়াল শামীমের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।