ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কুমারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী বিস্কুট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, সকালে না খেয়ে আসার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, বিস্কুট খেয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ে ক্লাসকালীন এ ঘটনা ঘটে। অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা সবাই ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার অ্যাসেম্বলি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাঁচ ছাত্রী হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হলে চিকিৎসকেরা বলেন, একই ধরনের বিস্কুট খাওয়ার পরপরই শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। এই ঘটনার পর বিদ্যালয়জুড়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে; অভিভাবক মহলে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় প্রাত্যহিক অ্যাসেম্বলি শেষ করে ছাত্রীদের ক্লাসে ফেরত যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই এক ছাত্রী শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করে। তার পরপরই একই শ্রেণির আরও চারজন একই উপসর্গে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
কুমারপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রথমে একজন অসুস্থ হওয়ায় আমরা ভেবেছিলাম অ্যালার্জির সমস্যা। কিন্তু পরপর পাঁচজনের একই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই। পরে সবাইকে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাকিয়া আক্তার বলেন, পাঁচ ছাত্রী শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছে। জিজ্ঞেস করে জানা যায়, অ্যাসেম্বলি শেষে তারা সবাই একই ধরনের বিস্কুট খেয়েছিল। তারপর থেকে উপসর্গ দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘ফুসফুস পরীক্ষা করে কোনো সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। কারও জ্বর, সর্দি বা কাশি ছিল না। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক। বিস্কুট মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল কি না বা তাতে কোনো রাসায়নিক ছিল কি না—সেটি নিশ্চিত হতে পরীক্ষা জরুরি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ছাত্রীদের অক্সিজেন দিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে মুখে যেকোনো খাবার আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের একজনের অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, সকালে একদম ভালো ছিল। স্কুলে গিয়ে কী এমন খেল যে শ্বাসই নিতে পারছে না; এখনো বুঝতে পারছি না।
এই ঘটনার পর কুমারপুর উচ্চবিদ্যালয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক অভিভাবক দুপুরে সন্তানদের স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান।
কুমারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস আলী জানান, বাচ্চারা সকলে না খেয়ে স্কুলে আসে। অ্যাসেম্বলি শেষে ক্লাস রুমে যায়। পরে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি না হলে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে, সকলের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন শিক্ষার্থীরা সবাই সুস্থ আছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি 






















