টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি :
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিশ্চিত না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনোভাবেই নির্বাচন দিতে পারে না বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলটির সাংগঠনিক সমন্বয় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করিনি। কারণ, যেই জুলাই সনদের এখন পর্যন্ত আইনগত ভিত্তি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়, যেই জুলাই সনদে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সংস্কারগুলোতো নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া রয়েছে সেগুলোর ভবিষ্যত কী হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিশ্চিত না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন দিতে পারে না। গণভোটে জুলাই সনদ পাস হয়ে গেলে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে সরকার বাধ্য থাকবে কি না, প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরে এই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দিকে যাবে কি না, এই বিষয়গুলো নিশ্চয়তা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এনসিপি তাদের জায়গায় জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারে না। এনসিপি সেটা করেনি, এনসিপি নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা রেখেছে।
সারজিস আলম বলেন, আমরা মনে করি, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া-পাওয়া শুধুমাত্র নির্বাচন কেন্দ্রিক হতে পারে না। আমরাও চাই, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উত্তরণের জন্য নির্বাচন হোক, ফেব্রুয়ারিতে হলেও এনসিপির সমস্যা নেই। কিন্তু জুলাই সনদের এই আইনি ভিত্তি বাস্তবায়নের রূপরেখা, বিচারিক প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হবে- তা ছাড়া শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক কথা বলা, এনসিপির অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়।
তিনি বলেন, পাশাপাশি অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কোনও প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারী আচরণ এনসিপি এবং এই তরুণ প্রজন্ম মেনে নেবে না। কোনও আইনি বাধা না থাকা সত্ত্বেও যখন এনসিপিকে তাদের যে প্রতীক শাপলা আমরা চেয়েছিলাম সেটি দিতে নানান টালবাহানা করা হচ্ছে। বিভিন্ন অযৌক্তিক কারণ দেখানো হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, যেহেতু কোনও আইনি বাধা নেই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে অবশ্যই প্রতীক হিসেবে শাপলাকে এনসিপির জন্য চাই এবং শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী সংসদ নির্বাচনে এনসিপি অংশগ্রহণ করবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে শাপলা আদায় করে নেবো।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের এ মুখ্য সংগঠক বলেন, গণভোটে জুলাই সনদ পাস হয়ে গেলে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে সরকার বাধ্য থাকবে কি না, প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরে এই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দিকে যাবে কি না, বিষয়গুলো নিশ্চয়তা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এনসিপি জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারে না।
তিনি বলেন, যখন একটা জিনিস আমার প্রাপ্য, এনসিপির প্রাপ্য, যখন সেটা দেওয়া হবে না, অবশ্যই স্বেচ্ছাচারী আচরণের বিরুদ্ধে আমার লড়াই করতে হবে। এনসিপির যদি প্রয়োজন হয়, এনসিপি এই লড়াইটা রাজনৈতিকভাবে রাজপথে করবে। যদি প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৪৯৫টি উপজেলার এনসিপির অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ রাজপথে নেমে এই অধিকারের জন্য লড়াই করবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি আমরা শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
সারজিস আলম বলেন, যে জুলাই সনদে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর নেই, সেই জুলাই সনদে অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকে অভ্যুত্থানকে সংগঠিত করেছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের প্রতিনিধিত্ব করা রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর নেই, আমরা মনে করি ওই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সামগ্রিক মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। এই জুলাই অভ্যুত্থানের পরে এই জুলাই সনদ এখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ জুলাই সনদ। এই জুলাই সনদ দিয়ে দায়সারা ভাব নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। তাদেরকে এই দায়বদ্ধতা পূরণ করে নির্বাচনের কথা চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া-পাওয়া শুধুমাত্র নির্বাচনকেন্দ্রিক হতে পারে না। আমরাও চাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উত্তরণের জন্য নির্বাচন হোক। ফেব্রুয়ারিতেও হলে সমস্যা নেই।
জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়া প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, এটি নির্ভর করবে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর। যে রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে থাকা মৌলিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে নিশ্চয়তা দেবে, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেবে এবং কাজে ও কথায় মিল থাকবে, তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হতে পারে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এনসিপি যদি এই প্রতিশ্রুতিগুলো পায়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট হতে পারে। যদি না পায়, তাহলে শুধুমাত্র কয়েকটি আসনের জন্য এনসিপি জোট করবে না। এনসিপি একেকভাবে নির্বাচন করবে।
টাঙ্গাইল জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান রাসেলের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দলটির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ হায়দার। এ সময় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি 
























