নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়েও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ তিনি দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বৈঠকটি সম্পূর্ণ সৌজন্যমূলক। তবে কিছু রাজনৈতিক বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত তিনি দেশে ফেরত আসবেন। আপনারা দোয়া করবেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, আমি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। সাড়ে ১৭ বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জেল থেকে মুক্ত হয়েছি। আমাদের জাতীয়তাবাদী দল থেকে একটি টিম করা হয়েছে। সেই টিমের মধ্যে আমিও একজন। আমার সঙ্গে সিনিয়র সেক্রেটারি কামরুজ্জামান সাহেব রয়েছেন। মাহবুব সাহেব আছেন। আরও একজনের থাকার কথা ছিল, কিন্তু তিনি আসতে পারেননি।
তিনি বলেন, আমাদের আসার উদ্দেশ্য কিছু কিছু জিনিস আমাদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে বিষয়গুলো আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের আসার উদ্দেশ্য বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারকে সহযোগিতা করা। সেই সহায়তার অংশ হিসেবে আমরা আমাদের কনসার্ন জানিয়েছি। তারাও একমত হয়েছেন। আলোচনা মোটামুটি ফলপ্রসূ হয়েছে। দ্যাটস ইট।
আপনি উদ্বেগের কথা বলেছেন, সেটি কী এমন প্রশ্নে লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে পতিত সরকার একটি বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেটা আপনার পত্রিকায় দেখেছেন। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে। তাদের সেই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন বানচাল করা। নির্বাচনে বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটানো। এটি একটি উদ্বেগের জায়গা। সে ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি।
‘আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। যেমন- বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ও লুট হওয়া অস্ত্র এখনো যে উদ্ধার হয়নি সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে’— বলেন তিনি।
আপনাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে কোনো সুপারিশ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা ব্যাপারে আমরা কনসার্ন জানিয়েছি। অতি সম্প্রতি এএসআই নিয়োগ হচ্ছে। সাধারণত নিয়োগ হয় কনস্টেবল, এসআই ও এএসপি পদে। কিন্তু এবার এএসআই নিয়োগ হচ্ছে। যারা কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করে তাদের একটা আশা থাকে ভবিষ্যতে এএসআই হবে। তারা ইন্সপেক্টর পর্যন্ত হতে পারে। আবার এসআই হিসেবে যারা যোগদান করে তারা ডিআইজি পর্যন্ত হতে পারে। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন মনে করছেন এমন প্রশ্নে বলেন, আমি এটুকু বলবো, তারা ভালো করার যথেষ্ট চেষ্টা করছেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আছে; লুট হওয়া এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। তবে পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের চেষ্টার ত্রুটি নেই বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্য করতে চান।
এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়কে বাবর বলেন, পার্র্শ্ববতী দেশে বসে শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি বিশেষ শিল্পগোষ্ঠী বৈঠক করেছে যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
দেশে অবৈধ অস্ত্র আসছে, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে বলে মন্তব্য কওে লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ভারতে শেখ হাসিনা সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে তারা বলে দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশে অবৈধ অস্ত্র আসছে তা নিয়েও উদ্বেগ আছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো করার যথেষ্ট চেষ্টা করছে সরকার।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগীতা করতে চায় বিএনপি। তবে কিছু বিষয়ে উদ্বেগ আছে তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আসলাম। এসময় তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে জানান তিনি।
এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমি স্যারের (লুৎফুজ্জামান বাবর) সঙ্গে তিন বছর কাজ করেছি। স্যারের আন্ডারে আমি চাকরি করেছি। সুতরাং উনার সঙ্গে আমার অনেক আগের পরিচয়। আজকে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। আমরা অনেক ধরনের কথাবার্তা বলেছি। পারিবারিক ও নানা বিষয়ে কথা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কথা বলার মধ্যে আলোচনার প্রেক্ষাপটে হয়তো দু-একটি রাষ্ট্রীয় বিষয় চলে এসেছে। কিন্তু সেটা খুব একটা বড় আলোচনা নয়।
এদিন বিকেল সোয়া ৪টার কিছু পরে লুৎফুজ্জামান বাবর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কক্ষে প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রবেশ করেন। দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টার ২০ মিনিটের দিকে তিনি বের হন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও সাবেক সিনিয়র সচিব কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।