স্পোর্টস ডেস্ক :
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হান্নান সরকার পদত্যাগ করেছেন। ২০২৬ সাল পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে চুক্তি থাকার পরেও তিনি সরে দাঁড়ানোর সিধান্ত নেন। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর সহকারী নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন হান্নান। জানা যায় তিনি বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এ প্রসঙ্গে বিসিবির একটি সূত্র জানায়, এক মাসের নোটিশে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে হান্নান সরকার নিজেও বিসিবির চাকরি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তি ছিল হান্নানের। ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই এই বেতন আকর্ষণীয় মনে হয়নি তাঁর কাছে।
নির্বাচক প্যানেল থেকে বাদ পড়ে গেলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়তে হতে পারে, যে কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই নিজেই নির্বাচকের চাকরি ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া বিসিবির সূত্র আরও জানায়, মূলত কোচিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক এ ব্যাটার। খেলা ছাড়ার পর কোচিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন তিনি। যদিও পরবর্তী সময়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের নির্বাচক হিসেবে বিসিবির চাকরিতে যোগ দেন হান্নান।
নির্বাচকের পদ ছাড়লেও ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকছেন হান্নান সরকার। এবার তাকে নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে। আসন্ন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) দিয়েই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করবেন হান্নান। তিনি জানিয়েছেন, ‘গতকাল পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এই মাসের শেষ পর্যন্ত (নির্বাচক পদে) আছি আরকি। এখন কোচিংয়ে মনোনিবেশ করব ডিপিএল দিয়ে। কয়েকটি দলের সঙ্গে কথাবার্তা চলতেছে, এখন দেখা যাক।’
হঠাৎ কেন এমন সম্মানের চাকরি ছাড়লেন এমন প্রশ্নে হান্নান বলেন, ‘আমি আমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দায়িত্ব ছাড়ছি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে ভবিষ্যতে কোচিংয়ে গেলে আমি যতটুকু উপকৃত হব, আমার থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটও উপকৃত হবে। তো আমার মনে হয়েছে যে এখনই (বিসিবির পদ) ছাড়ার সঠিক সময়। এখন মনে হচ্ছে যে লোকাল কোচদের ওপর বিসিবির আলাদা একটা নজর আছে এ কারণেই।’
তবে হুট করেই নয়, বিসিবির সঙ্গে আগে থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন হান্নান, ‘এই আলোচনাটা গত তিন মাস ধরে চলছিল বিসিবির সঙ্গে। এটা আমার একদিন বা দুই দিনের সিদ্ধান্ত না। এটা তিন মাস যাবৎ বিসিবির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সবমিলিয়ে সামনে যেহেতু ডিপিএল আছে এখনই সঠিক সময় ছাড়ার। ডিপিএল দিয়ে শুরু করব কোচিং ক্যারিয়ার, সামনে বিসিএল আছে, এইচপি ক্যাম্প হতে পারে বা এসসিএল।’
নির্বাচকের চাকরি অনেক সম্মানের, যে কারণে এই পদ ছাড়তে চায় না অনেকেই। তবুও এমন সিদ্ধান্তের নেপথ্য কারণ খোলাসা করে হান্নান জানান, ‘এক বছর ন্যাশনাল সিলেক্টর ছিলাম। তার আগে আমি বয়সভিত্তিক দলের সিলেক্টর ছিলাম আট বছর। তো সব মিলে আমার ৮ বছর ৮ মাসের ক্যারিয়ার। ওই জায়গাটা আমি খুব ভালো এনজয় করেছি। একটা স্টেজে আসার পরে মনে হয়েছে যে আমার এখন চিন্তা করার সময় এসেছে। তো এটা সাহসী নাকি দুর্বল সিদ্ধান্ত জানি না। আমি চিন্তা করছিলাম আমার জন্য এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। এ কারণেই আমি তিন মাস ধরে চিন্তা করে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি।’
নির্বাচক ক্যারিয়ারে বয়সভিত্তিক নির্বাচক হিসেবে যুব বিশ্বকাপ এবং দুটি যুব এশিয়া কাপ জিতেছেন হান্নান। এ ছাড়া এর আগে তিনি কাজ করেছেন বিপিএলের রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির (২০১২, ১৩, ১৬ ও ১৭ মৌসুমে) সহকারী কোচ এবং ডিপিএলে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ব্যাটিং কোচ হিসেবে। এ ছাড়া তিনি বিসিবির এইচপি (হাই-পারফরম্যান্স) ইউনিট, এনসিএল, বিসিএলেও কোচিং করিয়েছেন। কোচিং ক্যারিয়ার শুরুর আগে ২০১০-১১ সালে বিসিবির লেভেল ১-২ দুটি কোর্স করেছিলেন হান্নান।