Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬২৬ কোটি জমা হয় শেখ হাসিনার সেই পিয়নের

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচিত ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রীর কামরুন নাহারের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।

দুদক বলছে, আসামি জাহাঙ্গীর আলমের স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় এবং তিনি ও তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ ভোগ করার উদ্দেশ্যে ৮ টি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা ও জমাকৃত অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে উত্তোলন বা স্থানান্তর করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।

অনুসন্ধানকালে আরও দেখা যায়, মো. জাহাঙ্গীর আলম উপরোক্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে তার নিজ নামীয় ও তায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন। তার ৮টি ব্যাংকের ২৩ হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা এবং ৬২৪ কোটি ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৬৭১ টাকা উত্তোলিত হয়েছে। যা দুদকের অনুসন্ধানে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।

অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তার হিসাবে জমা হওয়ার পর তা বিভিন্ন পন্থায় স্থানান্তর করেছেন। যার মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর আলম তার মালিকানাধীন স্কাই রি এরেঞ্জ নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি চলতি হিসাবে শুধুমাত্র ২০২৪ সালের (প্রথম ৫ মাসে) ৮৩ দিনে মোট ১৭৮ কোটি টাকা জমা এবং ১৭৮ কোটি ৯৩ টাকা উত্তোলন/ফান্ড ট্রান্সফার করেন।

অন্য একটি মামলায় আসামি করা হয় মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারকে। তার বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ৬ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ ভোগ দখলে রাখার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির’র ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হওয়ার আগের দিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে পিএসসির এক গাড়িচালক কীভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হলেন তা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে শেখ হাসিনা তখন বলেন, ‘আমার বাসার একজন পিয়ন ছিল, সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক! হেলিকপ্টার ছাড়া নাকি চলে না। পরে তাকে ধরা হয়েছে। খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।’

শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের পর থেকেই আলোচনায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এই দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে দেশজুড়ে নানা সমালোচনা হতে থাকে। সরকার তখন তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। জব্দ করা হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। পরে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম পরিবারসহ আমেরিকায় পালিয়েছেন।

এদিকে অন্য একটি মামলা আসামি করা হয়েছে মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারকে। যেখানে বলা হয়, ছয় কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ ভোগ দখলে রাখার মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

জোয়ারে চলাচলের সড়ক বিচ্ছিন্ন, দুর্ভোগে ২০ হাজার বাসিন্দা  

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬২৬ কোটি জমা হয় শেখ হাসিনার সেই পিয়নের

প্রকাশের সময় : ০৮:২৩:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচিত ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রীর কামরুন নাহারের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।

দুদক বলছে, আসামি জাহাঙ্গীর আলমের স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় এবং তিনি ও তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ ভোগ করার উদ্দেশ্যে ৮ টি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা ও জমাকৃত অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে উত্তোলন বা স্থানান্তর করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।

অনুসন্ধানকালে আরও দেখা যায়, মো. জাহাঙ্গীর আলম উপরোক্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে তার নিজ নামীয় ও তায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন। তার ৮টি ব্যাংকের ২৩ হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা এবং ৬২৪ কোটি ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৬৭১ টাকা উত্তোলিত হয়েছে। যা দুদকের অনুসন্ধানে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।

অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তার হিসাবে জমা হওয়ার পর তা বিভিন্ন পন্থায় স্থানান্তর করেছেন। যার মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর আলম তার মালিকানাধীন স্কাই রি এরেঞ্জ নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি চলতি হিসাবে শুধুমাত্র ২০২৪ সালের (প্রথম ৫ মাসে) ৮৩ দিনে মোট ১৭৮ কোটি টাকা জমা এবং ১৭৮ কোটি ৯৩ টাকা উত্তোলন/ফান্ড ট্রান্সফার করেন।

অন্য একটি মামলায় আসামি করা হয় মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারকে। তার বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ৬ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ ভোগ দখলে রাখার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির’র ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হওয়ার আগের দিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে পিএসসির এক গাড়িচালক কীভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হলেন তা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে শেখ হাসিনা তখন বলেন, ‘আমার বাসার একজন পিয়ন ছিল, সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক! হেলিকপ্টার ছাড়া নাকি চলে না। পরে তাকে ধরা হয়েছে। খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।’

শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের পর থেকেই আলোচনায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এই দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে দেশজুড়ে নানা সমালোচনা হতে থাকে। সরকার তখন তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। জব্দ করা হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। পরে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম পরিবারসহ আমেরিকায় পালিয়েছেন।

এদিকে অন্য একটি মামলা আসামি করা হয়েছে মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারকে। যেখানে বলা হয়, ছয় কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ ভোগ দখলে রাখার মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।