নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইসলামি মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-ওলামা ও জনতার ঢল নেমেছে। যেখানে সারাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জড়ো হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এই সম্মেলনে যোগ দিতে ভোর থেকেই আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মানুষের সম্মেলনস্থলে আসতে থাকেন।
দাওয়াত ও তাবলিগ, মাদারেসে কওমিয়া এবং দীনের হেফাজতের লক্ষ্যে এ সম্মেলন; যা চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
সরেজমিনে গুলিস্তান, কাকরাইল, শাহবাগ, নীলক্ষেতসহ সোহরাওয়ার্দীর দিকে আসা প্রতিটি রাস্তায় ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।
অন্যদিকে, শাহবাগ, নীলক্ষেত, ঢাকা মেডিকেল, সচিবালয় ও হাইকোর্টের সামনের দিক দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সোহরাওয়ার্দীর সামনে দিয়ে যেতে চাওয়া গাড়িগুলোকে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে। এদিকে যেতে চাওয়া গাড়িগুলোকে বিকল্প পথে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
সম্মেলনে আসা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, মাওলানা সাদের অনুসারীরা তাকে দেশে এনে মুসলমানদের মধ্যে একটি বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমাদের ইসলামী দাওয়াতের কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদসহ টঙ্গী ইজতেমায় বিভক্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। অথচ দেশের অধিকাংশ আলেম-ওলামাসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমান তার বিপক্ষে। এ অবস্থায় যদি তাকে দেশে আনার পাঁয়তারা করা হয় দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই আমাদের আজকের এই সম্মেলন।
এর আগে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমরা দেশের সর্বস্তরের ওলামা-মাশায়েখ ও জনতাকে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
মহাসম্মেলনের আহ্বান জানানো বিশিষ্ট আলেমদের মধ্যে রয়েছেন- আল্লামা শাহ্ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, আল্লামা আব্দুল হামিদ, আল্লামা আব্দুল রহমান হাফেজ্জী, আল্লামা নুরুল ইসলাম, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা রশিদুর রহমান, আল্লামা শাইখ জিয়াউদ্দিন, আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান, আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা আরশাদ রহমানি, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, মাওলানা জাফর আহমাদ, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
এ ছাড়া রয়েছেন মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সা’দী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জিয়াউদ্দিন, মাওলানা আব্দুল হক, মাওলানা ইউনুস, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা আব্দুল হালিম, মাওলানা আনাস, মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মাওলানা শওকত হোসাইন সরকার, মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদী ও মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী।
বিশ্ব ইজতেমা ২০১৯ সাল থেকে তাবলিগের দুই পক্ষের জন্য দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবার দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। এবার তারা প্রথম পর্বে ইজতেমা করার দাবি জানান। তারই বিরোধিতা করে এ মহাসম্মেলনের ডাক দেন কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমরা।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সোমবার (৪ নভেম্বর) উভয় পক্ষকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা হলেও উপস্থিত হন শুধু মাওলানা সাদের অনুসারীরা। তাই সভা শেষে দুই পর্বের ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ হলেও কোন পর্বে কে ইজতেমা করবে তা পরে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সভা শেষে মাওলানা সাদের অনুসারীদের প্রতিনিধি মুয়ায বিন নুর বলেন, ‘আমরা শুধু একটা দাবি জানিয়েছি। আমরা আর বৈষম্য চাই না। আমরা প্রথম পর্বে ইজতেমা করতে চাই এবং যেকোনো মূল্যে মাওলানা সাদকে দেশে আনতে চাই।’
এর আগে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ‘দাওয়াত ও তাবলিগের শান্তিপূর্ণ কাজে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য মাওলানা সাদের অনুসারীরা তাকে ইজতেমায় আনা এবং প্রথম পর্বে ইজতেমা করার পাঁয়তারা করছেন। এসব বিষয় সামনে রেখে দেশের নতুন পরিস্থিতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত, কওমি মাদ্রাসাগুলোর হেফাজত ও দীনি জিম্মাদারি আরও সুচারুরূপে রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসম্মেলনে আসার আহ্বান জানাই।’