নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবুল হাসান স্বজন নামে এক চাকরিজীবী নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড়শ থেকে দুইশ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) রাতে নিহত স্বজনের ভাই আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার টিটু।
নিহত আবুল হাসান কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আবুল হাসনাত মো. শহিদ বাদল, আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু, শ্রমিক লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ আব্দুল করিম বাবু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, নাসিকের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহুল আমিন, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজর আলী, বন্দরের ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদ, তামাকপট্টি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জাতীয় পার্টির নেতা বিটু, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি নেতা দেলোয়ার প্রধান, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জ্বল, নাসিকের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন, শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুজিত সাহা, কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, বক্তাবলী পূর্ব গোপালনগর এলাকার বাসিন্দা মৃত আফসার আলীর পুত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম, আমলাপাড়া এলাকার মো. রিফাত, ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার বাসিন্দা আজমেরী ওসমানের ক্যাডার নাসির, আমলাপাড়া বড়বাড়ি এলাকার মৃত বাবুল মিয়ার ছেলে শ্যামল, বন্দরের ফুলহর এলাকার ছাত্রলীগ নেতা অহিদুজ্জামান অহিদ, বন্দর তিনগাঁও উত্তরপাড়া এলাকার আমির মিয়ার ছেলে শুভ, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি নেতা এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, কাঁচপুর এলাকার হোসেনের ছেলে ফয়সাল, দক্ষিণ লক্ষণখোলার শ্যামল দাসের ছেলে নির্ঝর দাস, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি টিপু সুলতান, আজমেরী ওসমানের বন্ধু রামু সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন, শামীম ওসমানের বিয়াই ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর ছেলে মিনহাজুল বিকি, নগর খানপুরের সেলিম মিয়ার ছেলে রিয়েল, গোগনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আজমীরের ছেলে বাপ্পি ও বান্টিসহ আরও অজ্ঞাত দেড় থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট বেলা দেড়টার দিকে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় মামলার বাদীর ভাই আবুল হাসানকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অপরাপর আসামির নির্দেশে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান তাকে গুলি করে হত্যা করেন।
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল হাসান। সে সময় চাষাঢ়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ চলছিল। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন আবুল হাসান। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ভোরে তিনি মারা যান।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি দেশ ছাড়েন।