নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট দিলেও আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রীদের ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ছুটোছুটি করার নজির নেই বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ গণমাধ্যমে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ কারা তাদের তালিকা দিন। আমরা দুদককে বলব তদন্ত করতে। যাদেরকে দুর্নীতিবাজ ভাবছেন, আপনারা তালিকা প্রস্তুত করুন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী , ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে কোন সদিচ্ছা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, অর্থনীতিবিদও এখন পোলারাইজড হয়ে গেছে। এখানে বিএনপি নামটা অর্থনীতিবিদ হয়েছে। তারা তাদের মনের যে ক্ষোভ, অসন্তোষ, ক্ষমতায় না থাকার যে বেদনা, ক্ষমতায় থাকলে যে সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্তির ব্যবস্থা থাকে সেটা ভেস্তে গেছে। ভেস্তে গেছে তাদেরই ভুলের কারণে।
তিনি বলেন, আমাদের উপদেষ্টাদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ অনেকেই আছে, তারা সবাই একবাক্যে পরীণত ও সাহসী বাজেট বলেছেন। একটা চ্যালেঞ্জ আছে সেটা হলো বাস্তবায়ন। বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ আমরাও স্বীকার করি। এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি, ইনশাআল্লাহ আমরা এই চ্যালেঞ্জও অতিক্রম করতে পারবো। দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এখন দেশের সংকট মোকাবিলা করার স্কিম রয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষকে সাহায্য করার জন্য এইসব পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি নিজেরাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে বসে দণ্ডিত এই আসামি আরাম আয়েশে দিন যাপন করছে। এই হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের হিসাব মির্জা ফখরুল সাহেবকে দিতে হবে।
বিএনপি বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করতে মাঠে নামবে তারা; এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি দুর্নীতিতে পাঁচ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এটা বাংলাদেশের সবাই জানে। তারা বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে। যাদের মূলনেতারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে, এটা এই বছরের সেরা জোকস।
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদার সুযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় আমরা অর্থনীতির মূল ধারায় আনার ব্যবস্থা করছি। এর ফলে ব্যাংকিং সিস্টেমে অর্থ প্রবাহ বাড়বে। অনেকের হাতে গোপন থাকা টাকা উদ্ধার করতে বাজেটে কালো টাকা সাদার করার সুযোগ আছে। এই সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে অন্যায়, অবৈধ কাজের শাস্তি মওকুফের সুযোগ নেই। সেটা ফৌজদারি অপরাধ। সেটা প্রচলিত আইনেই হবে। অন্যদের মাধ্যমে ট্যাক্স রিটার্ন তৈরি করাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকের ট্যাক্স রিটার্নে সকল সম্পদের বিবরণ থাকে না। এসব ভুল সংশোধন করার সুযোগ থাকতে হবে। অপ্রদর্শিত অর্থ, সম্পদ মূল ধারায় এনে ভবিষ্যতে তার ওপর আয় থেকে সরকার রাজস্ব আহরণ অধিক পরিমাণে বাড়াতে চায়।
বাজেটে কালো টাকা সাদার করার সুযোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক—সিপিডির এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকে আনার ব্যবস্থা করছি। ব্যাংকে এলে ট্যাক্সের সুবিধা আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলছেন, মাছ ধরতে গেলে আধার দিতে হবে। সেই কথাই বাস্তব।
তিনি বলেন, এখন সিপিডি কী বলল, টিআইবি কী বলল, সুজন কী বলল—এসব নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ওরা সবাই বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলে। কথার সাথে বাস্তব কর্মকাণ্ডে মিল নেই। বিএনপি নিজেরাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে বসে আরাম আয়েশে দিনযাপন করছেন। সেই টাকার হিসাব মির্জা ফখরুল সাহেবদের দিতে হবে।
বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, অর্থনীতিবিদরাও এখন পোলারাইজড হয়ে গেছে। এখানে বিএনপি মার্কা অর্থনীতিবিদও আছে। তারা তাদের ক্ষোভ, অসন্তোষ, ক্ষমতায় না থাকার বেদনা, ক্ষমতায় থাকলে প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে সেটা ভেস্তে গেছে। সেটা হয়েছে তাদের ভুলের কারণে। আমাদের উপদেষ্টা পরিষদেও অনেক অর্থনীতিবিদ রয়েছেন, শুক্রবারের বৈঠকে সবাই এক বাক্যে এ বাজেটকে পরিমিত ও সাহসী বাজেট বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। একটা চ্যালেঞ্জ আছে। সেটা হচ্ছে বাস্তবায়নের। সেটা অতিক্রম করার জন্য সরকার কাজ শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপি আজকে বড় বড় কথা বলে। অর্থ পাচারের কথা বলে, কালো টাকার কথা বলে, দেশকে গিলে খাওয়ার কথা বলে। তাদের সর্বশেষ বাজেট ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা। তারপরও বাজেটের আগে সাইফুর রহমান সাহেবকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ফোরামে দৌড়াতে হয়েছিল ভিক্ষার ঝুঁলি নিয়ে। আমাদের সময়ে বাজেট পূর্ববর্তী সময়ে কোনো অর্থমন্ত্রীকে বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা চাইতে হয়নি। এতে বুঝতে পারেন দেশটা কোথা থেকে কোথায় এসেছে।
পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের দুর্নীতির বিচার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের যেসব নেতাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) যাদের দুর্নীতিবাজ ভাবছেন তাঁদের তালিকাটা দেন, আমরা দুদককে বলব তদন্ত করতে।’
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জে (ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা) যারা ভোট দিয়েছেন, সেখানে নারীদের ২০০-৫০০ টাকা দিয়ে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল। শুক্রবার এমন মন্তব্য করেছিলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে কাদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।