নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের নতুন পদ্ধতি ক্রলিং পেগের বাস্তবায়ন নেই কার্ব মার্কেটে (খোলাবাজার)। সরকার ডলারের দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণের পরের দিনই ১২৩-১২৫ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে খোলাবাজারে। ডলারের সাথে অন্যান্য মুদ্রায়ও এর প্রভাব পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাজধানীর ফকিরাপুল, পল্টন, মতিঝিল এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলো ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
এছাড়াও ব্যাংকের এলসি খোলার দামও বেড়েছে। বুধবার (৮ মে) ১১৫ টাকায় এলসি করছিল এরকম ব্যাংক আজ বৃহস্পতিবার ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকা দর নিচ্ছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এসব এলাকায় বুধবার প্রতি এক ডলার কেনা রেট ছিল ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা, বিক্রি হয়েছে ১১৬ টাকায়। আজ বিক্রি চলছে ১২৫ টাকা। আর কেনার ক্ষেত্রে যে যার মতো করে দর ঠিক করে দিচ্ছেন এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো।
রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি মানি এক্সচেঞ্জে ক্রেতা সেজে ডলার কিনতে চাওয়ায় সেখানে কর্মরত একজন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বিকেলে হয়েছে। এখনও সিদ্ধান্তই নিতে পারিনি কতো দামে বিক্রি করব। বিকেলের দিকে ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে আসেন দেখি কি করা যায়। পরে এ প্রতিবেদক চলে আসার সময় পেছন দিক থেকে ডাকা হয়। বলা হয় মামা যদি কিনতে চান এক দাম লাগবে ১২৫ টাকা। যদি নিতে চান তাহলে ওই চায়ের দোকানে আসেন।
পাশেই আরেক কাউন্টারের একজন বলেন, মামা এখন গোয়েন্দা-এনএসআই-ডিজিএফআই আছে। আপনি সত্যিকারের ক্রেতা নাকি গোয়েন্দা বুঝি কেমনে। এখনও বিক্রি শুরু করিনি, অল্প পরিমাণ আছে সন্ধ্যায় কল দিয়ে আসবেন। দোকানের বাইরে যেয়ে দিয়ে আসব। তবে দাম কতো নিবেন সে প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগে আসেন তারপর বাধবে না। তবে ১২৫ টাকার নীচে দেওয়া যাবে না।
এদিন পল্টন এলাকায় মিলন নামে একজনের সঙ্গে কথা হয়। একটি মানি এক্সচেঞ্জের নির্বাহী হিসেবে আছেন তিনি। ক্রেতা সেজে মিলনের কাছে ডলার কিনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হয়েছে বিকেলে। এখনো সিদ্ধান্তই নিতে পারিনি কত দামে বিক্রি করবো। বিকেলের দিকে ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে আসেন দেখি কী করা যায়।’
পরে চলে আসার সময় পেছন থেকে ডাক দেন তিনি। বলেন, ‘মামা যদি কিনতে চান এক দাম লাগবে ১২৫ টাকা। যদি নিতে চান তাহলে ওই চায়ের দোকানে আসেন।’
সাইদুল নামে অন্য একজন বলেন, ‘মামা এখন গোয়েন্দা-এনএসআই-ডিজিএফআই আছে। আপনি সত্যিকারের ক্রেতা নাকি গোয়েন্দা বুঝি কেমনে। এখনো বিক্রি শুরু করিনি, অল্প পরিমাণ আছে, সন্ধ্যায় কল দিয়ে আসবেন। দোকানের বাইরে গিয়ে দিয়ে আসবো।’
তবে দাম কত নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে আসেন, তারপর বাধবে না (দাম নিয়ে)। তবে ১২৫ টাকার নিচে দেওয়া যাবে না।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের দাম একদিনে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক ডলার রেট ১১৭ টাকা; যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ দর। নিময় অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ১১৮ টাকা বিক্রি করতে পারবে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় মানি চেঞ্জারগুলো ডলার বিক্রি করছে না। আবার যাদের কাছে খুচরা ডলার আছে তারাও বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন। কারণ যেহেতু আনুষ্ঠানিক ডলার রেট ৭ টাকা বেড়েছে খোলাবাজারে কত বাড়ে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সবাই। এমন পরিস্থিতির কারণে খোলাবাজারে বিক্রি শূন্য হয়ে গেছে ডলার।
এদিকে ডলারের সাথে অন্যান্য মুদ্রা বিনিময় দামও বেশি চাওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ মানি চেঞ্জারগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, ১০ টাকা ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য মুদ্রার দাম বেড়েছে। ভারতীয় মুদ্রা গতকাল পর্যন্ত এক টাকা ৪০ পয়সা ছিল, আজ এক টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। অন্যান্য দেশের ম্দ্রুার দামও বাড়িয়েছেন তারা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আমাদের খুচরা ডলার পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ ঠিক আছে। এখনে কে বিক্রি করবে কি করবে না এটা তার নিজস্ব বিষয়। যারা মানি এক্সচেঞ্জে ডলার পায়নি তারা ব্যাংকে গেলেই ডলার কিনতে পারবেন। ব্যাংকে এখন ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ক্যাশ ডলার মজুদ আছে। যার ডলার দরকার ব্যাংকে গেলেই পাবেন।
তবে সরকারি বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ট্রাজারি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব শাখায় ডলার আছে তারা খুচরা ডলার বিক্রি করছে। তবে যে কেউ গেলেই ডলার পাবে না- নিজস্ব ও পরিচিত গ্রাহককেই শাখাগুলো ডলার দিচ্ছি। আজকে বেশিরভাগ ব্যাংক খুচরা প্রতি মার্কিন ডলার বিক্রি করছে ১১৮ টাকায়।
এর আগে বুধবার এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ বিনিময় পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ডলারের জন্য ক্রলিং পেগ মিড-রেট (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। এখন থেকে আন্তঃব্যাংক ও গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেনে তফসিলি ব্যাংকগুলো সিপিএমআরের আশপাশে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে।
‘ক্রলিং পেগ’ হচ্ছে দেশের স্থানীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এটা অনেকটা নিয়ন্ত্রিত নীতিরই মতোই। এ নীতি হচ্ছে কোনো মুদ্রার বিনিময় হারকে নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামার অনুমতি দেওয়া। অর্থাৎ ডলারের বিনিময় হার ওঠানামার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমারেখা ঠিক করে দেওয়া। সাধারণত উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারজনিত অস্থিরতা তৈরি হলে এ সীমা সমন্বয় করা হয়।