নিজস্ব প্রতিবেদক :
আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মানববন্ধনে কান্না করে আলোচনায় আসা শিশু নূরীর মা হাফসা আক্তার পুতুলকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ওই স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে জামিন বহাল রাখতে হাফসা আক্তার পুতুলের দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে চেম্বার জজ আদালতের দেওয়া আদেশ বহাল রইলো আপিল বিভাগেও।
হাফসা আক্তার পুতুলের দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার (২২ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল ও কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
আদালতে হাফসা আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, হাফসা আক্তারের দুই শিশু সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করে জামিন প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, হাফসা আক্তারের এক সন্তান নূরীর বয়স ৪ বছর। আরেক সন্তানের বয়স তার থেকে একটু বেশি। তাদের বাবাও পলাতক। শিশুদের দেখভাল করার কেউ নাই। এছাড়া যে মামলায় তিনি গ্রেপ্তার রয়েছেন সেটাতে পুলিশ চার, সাড়ে চার মাসেও চার্জশিট দেয়নি।
এ সময় আদালত বলেন, আপনাদের আবেদন আংশিক মঞ্জুর করে জামিন আবেদনের শুনানি আমরা এগিয়ে দিচ্ছি। আগামী ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে।
তখন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, শিশুদের কথা চিন্তা করে হাফসা আক্তারকে জামিন দিতে পারেন। অন্যথায় শিশুদেরও কারাগারে পাঠিয়ে দিন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, হাফসা আক্তার যে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে ভিডিও ফুটেজে তার প্রমাণ রয়েছে।
শুনানি শেষে আদালত আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
ওই মামলায় গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে কারাগারে আছেন হাফসা। পরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ২৫ ফেব্রুয়ারি জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর তিনি জামিন চেয়ে ৩ মার্চ হাইকোর্টে আবেদন করেন।
শুনানির সময় ৪ মার্চ দাদির সঙ্গে হাইকোর্টে এসেছিল দুই শিশু। একজন হচ্ছে চার বছর বয়সী নূরজাহান ও অপরজন সাত বছর বয়সী আকলিমা।
শুনানি শেষে গত ৬ মার্চ বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শিশুদের মা হাফসাকে জামিন দেন।
এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত স্থগিতাদেশ দেন। এর ধারবাহিকতায় আবেদনটি আপিল বিভাগে সোমবার শুনানির জন্য ওঠে।
দুই শিশুর বাবা আবদুল হামিদ ভূঁইয়া বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দুই শিশুর দাদা আবদুল হাই ভূঁইয়া ২৯ নভেম্বরের মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলেছিলেন, তার বড় ছেলে হামিদকে পুলিশ খুঁজছে। তাকে না পেয়ে ছেলের স্ত্রী হাফসাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ হাফসা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে দাদা-দাদির হাত ধরে আসে দুই অবুঝ শিশু বর্ষা ও নূরী। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কারাবন্দি মায়ের জন্য মুক্তি দাবি করে এই দুই শিশুকন্যা। শিশু বর্ষা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে, আমার মাকে ছেড়ে দেন। আমার পরীক্ষা। আমি মাকে ছাড়া স্কুলে যেতে পারি না।
সেদিন তিন ছেলের গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়ে বাবা আব্দুল হাই বলেন, আমার তিন সন্তানকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। এক ছেলেকে ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। বড় ছেলেকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে পুত্রবধূকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে পুলিশ। অথচ, আমার ছেলের বউ রাজনীতিতে জড়িত নন।