স্পোর্টস ডেস্ক :
ম্যাচের আগেই প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) কোচ লুই এনরিক বলেছিলেন, তার দল দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়াবে এবং সেমিফাইনালে খেলবে। আত্মবিশ্বাসী এনরিকের কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ৩-২ গোলে হারের পর দ্বিতীয় লেগে ১৮০ ডিগ্রিতে ঘুরে দাঁড়ালো পিএসজি। এই লেগে বার্সেলোনাকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ফরাসী ক্লাবটি। জোড়া গোল করেন দলের মূল তারকা কিলিয়ান এমবাপে।
দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৪ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বার্সাকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি।
২০১৯ সালের পর প্রথমবার বার্সেলোনা স্বপ্ন দেখছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু দুর্দান্ত ছন্দে ফেরা কিলিয়ান এমবাপে আর তিন লাল কার্ড দেখানো রেফারি ইস্তভান কোভাকস যেন ছিটকে দিলেন বার্সাকে। কোভাকস প্রথম লাল কার্ড দেখিয়েছেন ম্যাচের ৪০ মিনিটে। সেটাই বার্সার রক্ষণের নেতা রোনাল্ড আরাউহোকে। এরপর ৬৪ মিনিটে ভিএআর দেখেও বার্সার পেনাল্টি আবেদন নাকচ করেছেন। মাঝে লাল কার্ড দেখিয়েছেন বার্সা কোচ জাভি হার্নান্দেজ এবং গোলরক্ষক কোচ রোমান দে লা ফুয়েন্তেকে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ঘরের মাঠ এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে ম্যাচের শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল বার্সেলোনাই। পিএসজির রক্ষণে একের পর এক আক্রমণ শাণিয়েছিল দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় লামিনে ইয়ামালের দুর্দান্ত পাসে বল পেয়ে ম্যাচের ১২ মিনিটেই দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রাফিনিয়া।
প্রথম লেগে জোড়া গোল করা এই ব্রাজিলিয়ান তারকা দ্বিতীয়ার্ধেও দলকে এগিয়ে দেয়ার পর ম্যাচে বার্সা আধিপত্য ফুটে ওঠে। তবে বিপর্যয় নেমে আসে ম্যাচের ২৯ মিনিটের সময়। পিএসজির ব্রাডলি বারকোলাকে ফাউল করায় সরাসি লা কার্ড দেখেন কাতালানদের রোনাল্ড আরাউহো। ফলে আধঘন্টা না হতেই দশ জনের দলে পরিণত হয় বার্সা।
খর্বশক্তির প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ধীরে ধীরে আক্রমণ শাণাতে থাকে পিএসজি। শেষ পর্যন্ত সফরকারীরা সমতাসূচক গোলটি পায় ম্যাচের ৪০ মিনিটে। এ মৌসুমে বার্সা থেকে পিএসজিতে নাম লিখিয়েছেন উসমান দেম্বেলে। একসময় কাতালান ক্লাবটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখতে চাওয়া দেম্বেলের গোলেই ম্যাচে সমতায় ফেরে পিএসজি।
এদিকে প্রথমার্ধ সমতায় শেষ হওয়ার পর পিএসজি ম্যাচে লিড নেয় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিট পেরুনোর আগেই অ্যাগ্রিগেটেও সমতা এনে ফেলে পিএসজি। আশরাফ হাকিমি আগের ম্যাচে ছিলেন না। এই ম্যাচে তারই দেয়া পাস থেকে সমতায় আসে প্যারিসের ক্লাবটি। স্কোরশিটে নাম লেখান ভিতিনহা। পিএসজি তখন বার্সেলোনার বিরুদ্ধে আরেকটি কামব্যাকের গল্প লিখতে প্রস্তুত।
খানিক পরে সেটা করেও ফেলে তারা। ডেম্বেলেকে ফাউল করে সফরকারী দলকে পেনাল্টি উপহার দেন হোয়াও ফেলিক্স। প্যারিসের ক্লাবটিকে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন এমবাপে।
বার্সা যে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায়নি তা না। তবে একবার তাদের বঞ্চিত করেছেন রেফারি। আরেকবার নিজেরাই পারেনি। ৬৪ মিনিটে গুন্দোয়ানকে ফাউল করেন ভিতিনহা। রেফারি ভিএআর চেক পর্যন্ত করেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন রোমানিয়ার রেফারি ইস্তভান কোভাকস।
আর ৭৩ মিনিটে বার্সা স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি নিজেই ব্যর্থ হয়েছেন গোলরক্ষক ডোনারুম্মাকে পরাস্ত করতে। ফিরতি বলে ফেরান তরেসও ব্যর্থ হয়েছেন।
৮৯ মিনিটে বার্সার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন এমবাপে। প্রতি আক্রমণে বার্সা গোলকিপার মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন বল রুখে দিলেও ডিফেন্ডার জুলস কুন্দের ভুলে বলটা আবারও পেয়ে বসেন এমবাপে। দ্বিতীয় দফায় এই ফেঞ্চ স্ট্রাইকার আর ভুল করেননি। ৪-১ গোলে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন এমবাপে।
চার বছর পর প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেমিফাইনাল খেলার আশাও শেষ হয় হতাশায়। এ মৌসুম শেষেই কোচের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির কিংবদন্তি খেলোয়াড় জাভি হার্নান্দেজ, তার বিদায়টাও খুব ভালোভাবে হলো না। লা লিগা জয়ের সম্ভাবনাও তাদের নেই বললেই চলে।