নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সারাদেশে এখন সামাজিক নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। কুষ্টিয়ায় এক যুবককে ১০ টুকরা করেছে ছাত্রলীগ নেতা, তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। এখন শুধু বিএনপির ওপর আক্রমণ করছে না তারা, লুটের টাকা ভাগাভাগি করতে নিজেরা নিজেদের হত্যা করছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে দেশ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর গুলশানে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শিরোনামে সারা দেশে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে রিজভীর নেতৃত্বে গুলশান এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে ‘ডামি’ আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি ছাড়াও সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন দাবি করা হয় লিফলেটে।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করে তারা মনে করেছে সারা বাংলাদেশের জমিদার হয়ে গেছে। এ জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই থামবে না। কারণ এ ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো যে আন্দোলন করছে, যে লড়াই করছে, সেটি নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, সেটি হলো গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার লড়াই, জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত থাকবে।
রিজভী বলেন, আজ বাংলাদেশ এক চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজি ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব দুর্বল করা হয়েছে। তামাশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে। সীমান্তে বাংলাদেশিদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আর গতকাল বাংলাদেশের ৩টি ছাগল নাকি তাদের সীমানার ভেতরে গেছে, সে তিনটি ছাগল ধরে পতাকা বৈঠক করে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ।
তিনি বলেন, বিএসএফের কাছে ছাগলের দাম আছে, কিন্ত মানুষের দাম নেই। ৩টি ছাগল ফেরত দেওয়া শতাব্দির শ্রেষ্ঠ তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আজ তামাশা করা হচ্ছে। ওই দিকে টেকনাফ সীমান্তে গুলাগুলি চলছে। সীমান্তে বাংলাদেশের কৃষকরা ভয়ে কাজ করতে পারছে না। কৃষকরা অনাহারে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে আর আমাদের সরকার নিরব। তারা হাত গুঁটিয়ে বসে আছে। একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করার সাহস তাদের নেই। এ পরিস্থিতি চলতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ হাত গুঁটিয়ে বসে থাকবে না।’
নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী চলছে? ছাত্রলীগ সেখানে শৌন আনন্দের উৎসবে পরিণত করেছে। কুষ্টিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই সরকার জনগণের টাকা লুটের পর তা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেরা নিজেরা হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।’
রিজভী আরও বলেন, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার নিজেদেরকে জমিদার ভেবেছে। সেজন্যই তারা দেশে জমিদারতন্ত্র কায়েম করেছে। কিন্তু এই জমিরদারতন্ত্রের সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে। জনগণের কাছে আপনাদেরকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতেই হবে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। এই আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করার আন্দোলন। এটা চলছে এবং অব্যাহত থাকবে।
লিফলেট বিতরণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুবদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, কাজী রফিকুল ইসলাম রফিক, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য আরিফা সুলতানা রুমা, বিএনপি নেতা মো, আশফাকুল ইসলাম সরকার, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল, রেহেনা আক্তার শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক জিয়ন, সাদেক মিয়া, জাকারিয়া হোসেন ইমন, ঢাবির যুগ্ম সম্পাদক রাজু আহমেদ, ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রদলের সৈয়দা সুমাইয়া পারভীন, প্যাব দপ্তর সম্পাদক হাসান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা মিরাজ হোসেন, আশরাফুল আসাদ, সাইদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদল নেতা আতিক, যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম, কাজী মনজুর রহমান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মাহমুদ, ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রদলের তোহা আমিন প্রমুখ।