নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে দুর্নীতির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ প্রতিবেদনের প্রক্রিয়াগুলো ধোঁয়াশাপূর্ণ। তাই ধারণাসূচকের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মন্তব্য করার কোনো অবকাশ নেই।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুদক কার্যালয়ে সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের দুই ধাপ অবনমন’-টিআইবির প্রতিবেদন বিষয়ে তিনি একথা বলেন।
দুদক সচিব বলেন, তাদের (টিআইবি) সব কিছুতেই ধোঁয়াশা, কোথা থেকে কতটুকু নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা পরিষ্কার না। কোন কোন বিষয়ের ওপরে কী কী প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, যেগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। সুতরাং টিআইবির ধারণাসূচকের বিষয়ে দুদকের পক্ষে মন্তব্য করার কোনো অবকাশ নেই।
তিনি বলেন, দুদক-টিআইবি কেউ কারও প্রতিপক্ষ না। দুদক একটা স্বাধীন সংস্থা আইন মোতাবেক কাজ করে। টিআইবি একটা এনজিও, তারা পারসেপশন বা ধারণা প্রকাশ করেছে। কীসের ভিত্তিতে করেছে তাও তারা বলেছে। কাজেই তাদের দুদকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই। দুদক তার আইন অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
টিআইয়ের প্রতিবেদনকে অস্পষ্ট উল্লেখ করে দুদক সচিব বলেন, টিআই নীতিমালা অনুযায়ী দুর্নীতি ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা ‘অস্পষ্ট’। তাদের সবকিছুই তো ধোঁয়াশা, কোথা থেকে কতটুকু কি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা পরিষ্কার না। কোন কোন বিষয়ের ওপরে কী কী প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, যেগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই।
টিআইবির প্রতিবেদনকে আমলে নিচ্ছে না দুদক এমন প্রশ্নে মাহবুব হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন টিআইবির প্রতিপক্ষ না। দুদক তার আইন অনুযায়ী কাজ করছে। টিআইবি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তার একটি পারসেপশন প্রকাশ করেছে। সেটি তারা করতেই পারে।
তিনি বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) নীতিমালা অনুযায়ী দুর্নীতি ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রণয়ন করা হয় কয়েকটি জরিপের উপর ভিত্তি করে। এই জরিপগুলোতে মূলত ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকদের ধারণার প্রতিফলন ঘটে থাকে। এইক্ষেত্রে তারা কি বিবেচনায় নিয়েছে সেটির ব্যাখ্যা নেই।
‘রাষ্ট্রের প্রধান ৩টি অঙ্গ নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আইন বিভাগের (জাতীয় সংসদ) অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ বিষয়ে সরকার মন্তব্য করতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।
দুদক সচিব বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের সিপিআই নির্ধারণের জন্য মোট ৮টি জরিপ নির্ধারিত হয়েছে। তার কোন কোনো বিষয়ে জরিপ করেছে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
এর আগে, মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআই সিপিআই প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। যা বাংলাদেশের স্কোর ২৫ থেকে ১ পয়েন্ট কমে ২৪ হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে দুই ধাপ অবনমন হয়েছে বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। সেই সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সূচকের বিশ্লেষণ করলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন। স্কোর ও অবস্থানের এই অবনমন প্রমাণ করে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা বাস্তবিক অর্থে কার্যকর প্রয়োগ হয়নি। বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের আরও অবনতি হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 






















