নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুর্নীতি দমন কমিশন যেন আজ বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে এমন দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি এবং চলমান আন্দোলনকে নেতৃত্ব শূন্য করতে প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক অভিযোগে মামলা ও রায় দিয়ে গোয়েবলসের মতো মিথ্যাচার করছে।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যেসব সম্পত্তির মালিক তারেক রহমান নন, কোনো দলিল-চুক্তিতে তার নাম, স্বাক্ষর বা সংশ্লিষ্টতা নাই, সেসব সম্পত্তির গায়েবি মালিক বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের কর পরিশোধকৃত সম্পদ নিয়েও কাল্পনিক অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুগত ব্যবসায়ী, আমলা ও নেতাকর্মীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ দুদক নেয় না। জনগণকে বিভ্রান্ত ও আন্দোলন দমন করতে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে আবারও চক্রান্ত শুরু করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। এ চক্রান্তের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দুদক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আদালত। এই প্রসিডিংস ফরমায়েশী এবং প্রতিহিংসামূলক। ১/১ এর জরুরি অবস্থার অনৈতিক সরকার দেশকে বিরাজনীতিকরণের লক্ষে মাইনাস-টু ফর্মূলাসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদের মিশন সফল করতে চেয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তারেক রহমানের স্ত্রী এবং জিয়া পরিবারের সদস্য বিধায় ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধেও একই মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়। জনগণের কাছে রাজনীতিকে এবং একই সাথে স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র, উন্নয়ন সমৃদ্ধির ধারক ও বাহক জিয়া পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন ও বিতর্কীত করার অপচেষ্টায় বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের জরুরি অবস্থার সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের মামলাগুলো বিভিন্ন উপায়ে স্থগিত বা প্রত্যাহার করলেও বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ১/১১ সরকারের দায়ের করা মামলাগুলো অব্যাহত রেখে সেগুলো ফরমায়েশী রায় দিয়ে তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করেছে। এখনও ঠিক একই কায়দায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে একতরফাভাবে সাজা দেওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এ সরকার।
ফখরুল বলেন, আজ এমন এক সময় তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হলো, যখন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিরন্ময় নেতৃত্বে ব্যর্থ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলন চলছে। ব্যাপক জনসম্পৃক্ত এই আন্দোলনে সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দমন করার জন্য গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করছে। বাধা, প্রতিবদ্ধকতা, গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়ন চালিয়েও আন্দোলন নসাৎ করতে পারছে না, জনস্রোত ঠেকাতে পারছে না। তাই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে নেতাকর্মী ও জনসাধারণের মনোবল বিনষ্ট করতে সরকারের ইঙ্গিতে এই মামলা অব্যাহত আছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে তা অবান্তর, ভিত্তিহীন ও অমূলক। চার্জ গঠন করে মামলার একতরফা যে রায় দেওয়া হবে তা হবে প্রতিহিংসামূলক ফরমায়েশী। বিএনপি সরকারের হীন এই কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে এবং সরকারকে এসব হীন ষড়যন্ত্র পরিত্যাগ করে সুস্থ ও সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছে। এসব মামলা ও রায় দিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত বা ডা. জোবাইদা রহমানকে হেয়প্রতিপন্ন করতে পারবে না এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চলমান আন্দোলন বিভ্রান্ত বা নস্যাৎ করতে পারবে না।
তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তা অবান্তর ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, চার্জ গঠন করে মামলার একতরফা যে রায় দেওয়া হবে তা হবে প্রতিহিংসামূলক ফরমায়েশি।
ফখরুল বলেন, অবিলম্বে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা, ফরমায়েশী আদেশ ও দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত এই মিথ্যা এবং বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া একতরফাভাবে সাজা দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহব্বান জানান তিনি।
নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আবারও আগুন লেগেছে। আমরা এ ঘটনায় শোক জানাচ্ছি। যাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিম রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালে প্রিন্স প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।