শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি :
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে প্রবেশের সুবিধার জন্য সরকারি অর্থে ৩১ লাখ টাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে না করে ব্যক্তি স্বার্থে এমন সেতু নির্মাণ করাকে স্থানীয়রা দেখছেন ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হিসেবে। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ওপর মহলের নির্দেশে’ বাধ্য হয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এমএসআরডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডামুড্যা উপজেলার চরধানকাটি আদাসন দরবার শরীফ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে এলজিইডি। ৩১ লাখ ১২ হাজার চুক্তিমূল্য ধরে কালভার্ট নির্মাণের কাজটি শেষ করে মিনহাজ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আশপাশে কোনো বসতবাড়ি নেই। খালের ওপাশে রয়েছে একটি বড় পুকুর, যার পাশ দিয়ে যাতায়াতের কোনো সড়কও নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবের গাড়িচালক মোকসেদ সরদার ওই পুকুরের মালিক এবং ভবিষ্যতে সেখানে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং বিশেষ তদবিরে এই সেতুটি নির্মিত হয়েছে।
সরকারি টাকা নষ্ট করে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় ক্ষোভ স্থানীয়দের। মোহাম্মদ সুমন নামের এক স্থানীয় বলেন, একত্রিশ লাখ টাকা নষ্ট করে শুধু শুধু একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। এই ব্রিজ দিয়ে কোনো লোকের যাতায়াত নেই, সামনে শুধু দুইটা পুকুর আছে। কোনো এক প্রভাবশালী লোক এটা করেছে। এক কথায় এটা অন্যায়। সরকারের টাকা যারা এভাবে নষ্ট করছে তাদের আমরা বিচার চাই।
ইব্রাহিম মোড়ল নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এই ব্রিজটি সরকার যেখানে বানিয়েছে সেখানে ঘরবাড়ি নেই। সামনে একটা পুস্কুনি (পুকুর) আছে শুধু। অথচ একটু দূরেই খালের ওপারে ঘরবাড়ি আছে সেখানে তারা সাঁকো ব্যবহার করছে। এই ব্রিজটি এমন স্থানে নির্মাণ করার দরকার ছিলো, যেখানে সবাই এটার সুফল পেতো।
ব্যক্তি স্বার্থে এমন প্রকল্পের বিরোধীতা করেছে সচেতন মহল। প্রশ্ন তুলেছেন বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের নীতি ও কার্য সম্পাদন নিয়ে। ইমরান আল নাজির নামের এক সচেতন নাগরিক বলেন, পশ্চিম আদাসন এলাকায় যে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটির বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি। আমাদের জেলায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন নির্মাণ না করে একজন ব্যক্তির স্বার্থে ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে এখন পর্যন্ত কোন বাড়িঘর কিংবা সামনে রাস্তাঘাট নেই। আসলে এধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ইঞ্জিনিয়ার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যোগসাজশে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এধরণের প্রকল্প যারা করেছেন এবং জনগণের টাকা লুটপাট করেছেন এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।

তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের গাড়িচালক মোকসেদ সরদারের। তবে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলে একপ্রকার উত্তর না দিয়েই পালিয়ে যায়। শুধু বলেন, আমি এখানে বাড়ি নির্মাণ করবো।
এদিকে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি খোলাসা করলেন এলজিইডির ডামুড্যা উপজেলা প্রকৌশলী আবু নাঈম নাবিল। তার ভাষ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে সুপারিশ করে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন ওই গাড়িচালক। আবু নাঈম নাবিল বলেন, আমরা উপজেলা থেকে প্রকল্পে এ ধরনের কোনো প্রপোজাল মন্ত্রণালয়ে পাঠাইনি। ওই গাড়িচালক সচিবকে দিয়ে তদবির করে কীভাবে যেন এটি ঢুকিয়েছে। পিডি চিঠি দিয়েছে এটি বাস্তবায়ন করার জন্য। আমরা পিডিকে জানিয়েছিলাম এটি আমাদের প্রকল্পের মধ্যে পড়ে না। পরে পিডি নিজে ফোন দিয়েছে ও হেড অফিস থেকে জানানো হয়েছে এই কাজটি সম্পাদনের জন্য। আমি যেহেতু চাকুরী করি, আমার কিছুই করার ছিলো না।
জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে কোন ব্রিজ দেওয়া হয়নি। তারা তখন বলেছিলেন এর পাশ দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করে গ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই প্রেক্ষিতে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এই চাইতেও জণগুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল সেখানে কেন এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় সরকারের কাজ করি, সেখানে জনপ্রতিনিধিরা যেভাবে চায় সেভাবে কাজ করতে হয়। তাদের প্রস্তাব আমাদের গ্রহণ করতে হয়।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্রিজ নির্মাণস্থল পরিদর্শন ও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয় রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের অবশ্যই দরকার আছে। আমরা তা করেছি। তবে তখন তারা আমাদের বলেছিলো, ওইদিক দিয়ে একটি রাস্তা বের করে দেয়া হবে।
শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি 























