নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হবে। এই বিভাগ তৈরি করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এর উদ্দেশ্য ছিল এমডি নিয়োগ ও পর্ষদে পছন্দের লোক বসিয়ে লুটপাট করা।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ইকোনমিক রিফর্ম সামিট ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি আগের বার ক্ষমতায় এসে এটি তুলে দিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এটি আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবার এটি বিলুপ্ত করবে।আর্থিক খাতে সংস্কার করা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। শুধু স্বায়ত্তশাসন যথেষ্ট নয়, পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার করা হবে।
আমীর খসরু বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুই ভাগ করা হয়েছে। এতে কোনো কাজ হবে না। কারণ, এক ভাগ থাকতেও আমলারা পরিচালনা করতেন, দুই ভাগ হওয়ার পরও আমলারা পরিচালনা করছেন। ফলে এনবিআর ভাগ হওয়ার পরও কোনো বাড়তি সুফল পাওয়া যাবে না।
আমির খসরু আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবনের যেসব সমস্যা রয়েছে-তা আমলারা জানেন না। দেশের মানুষ কীভাবে আয় করে, কীভাবে ব্যয় করে, ব্যবসার পেছনে কীভাবে পরিশ্রম দেয়, ব্যবসা পরিচালনায় কী ধরনের সমস্যা হয় এবং তার সমাধান কীভাবে করতে হয়-এসব বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। যারা ট্যাক্স নীতি প্রণয়ন করবেন, তাদের এসব বিষয় জানা জরুরি।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পথে প্রধান বাধা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা-এমন মন্তব্য করে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার কিছু নেই। যদি তাদের দায়িত্ব কমিয়ে দেওয়া যায়, যদি কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তারা নিয়ন্ত্রিত হবে। আমরা বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে চাই। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এ কাজটি করবে। এজন্য বেসরকারি খাতকে প্রস্তুত হতে হবে।
তিনি বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউডি ইস্যুর বিষয় আছে। আগে এটি করতো রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তখন সময় বেশি লাগতো, পাশাপাশি ঘুষ দিতে হতো। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ইউডি ইস্যুর কাজ ইপিবির কাছ থেকে নিয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এখনো সেই দায়িত্ব বিজিএমইএ-এর কাছেই আছে। এর ফলে যেমন ঘুষ দিতে হচ্ছে না, তেমনি বাড়তি সময়ও ক্ষেপণ হচ্ছে না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে সহায়তা করতে আমরা বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করব, যাতে আমলাতন্ত্রের কারণে বিনিয়োগ ব্যাহত না হয়।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সঙ্গে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা হবে। তা না হলে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা দেওয়া হবে উল্লেখ করে দলটির এই নেতা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এখন লুটপাটের জায়গা হয়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে কাকে পরিচালক করা হবে, কীভাবে ভাগ-বাটোয়ারা হবে-এই কাজই করে বিভাগটি। আগেরবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করেছিলাম। হাসিনা ক্ষমতায় এসে আবার এটি সক্রিয় করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাখা হবে না, যাতে সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণের নামে লুটপাটের সুযোগ বন্ধ করা যায়।
নিজস্ব প্রতিবেদক 

























