স্পোর্টস ডেস্ক :
উইকেটে দারুণ সহায়তা থাকলেও পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট নিতে পারল না বাংলাদেশ। তবে রিশাদ হোসেন আক্রমণে আসতেই পাল্টে গেল চিত্র। আগে খেলা ১১ ওয়ানডেতে কখনও ২ উইকেটে না পাওয়া এই লেগ স্পিনার একাই ধসিয়ে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপ। রিশাদ হোসেনের অবিশ্বাস্য এক বোলিং স্পেল বাংলাদেশকে এনে দিল স্বস্তির এক জয়। রিশাদের রেকর্ড গড়া ফাইফারে মিরপুরে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের কালো রঙের মন্থর, অসমান বাউন্সসম্পন্ন ও টার্নিং পিচে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ রানে অলআউট হয় তারা। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৯ ওভারে মাত্র ১৩৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
ম্যাচের আগে তুমুল কৌতূহল ছিল কালো রঙয়ের উইকেট নিয়ে। ম্যাচের শুরুর দিকে পেসারদের বলে বাউন্স ভালোই ছিল উইকেটে। তবে প্রথম ১০ ওভারেই স্পিনারদের বল টার্ন করা শুরু করে অনেকটা। ম্যাচের বাকি সময়টাতেও স্পিনাররা টার্ন পেয়েছেন অনেক। বাউন্স খুব নিচু হয়নি, তবে বল গ্রিপও করেছে বেশ। সব মিলিয়ে ব্যাটসম্যানদের কাজ ছিল কঠিন।
সেখানে ম্যাচের একমাত্র ফিফটি করেন হৃদয়। অভিষেকে ৪৬ রানের ইনিংস আসে মাহিদুল ইসলামের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ তোলে ২০৭ রান।
রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের শুরুটা ভালো হলেও রিশাদের স্পিনে এলোমেলো যায় তাদের ব্যাটিং লাইন আপ। ১১ ওভার আগেই গুটিয়ে যায় তারা ১৩৩ রানে। এক পর্যায়ে তাদের রান ছিল ১ উইকেটে ৭৯। সেখান থেকে ৫৪ রানের মধ্যে হারায় তারা ৯ উইকেট।
মিরপুরে টস হেরে আগে ব্যাটিং পেয়ে খুশিই ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে তার হাসি দ্রুতই মিলিয়ে যায় ওপেনারদের ব্যর্থতায়। সাম্প্রতিক সময়ের ভরসা সাইফ হাসান (৩) বিদায় নেন দ্বিতীয় ওভারেই। পরের ওভারেই আলগা শটে ফিরে যান ১০ মাস পর ওয়ানডেতে ফেরা সৌম্য সরকার (৪)।
নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় শুরুতে বাউন্ডারি পেলেও এরপর মন দেন উইকেট আঁকড়ে রাখায়। প্রথম ৫ ওভারে ২৫ রান তোলা দলের পরের ২৫ রান করতে লেগে যায় আরও ১০ ওভারের বেশি। ষষ্ঠ থেকে ২১তম ওভারের মধ্যে বাউন্ডারি আসে স্রেফ একটি।
মন্থর শুরু যখন পুষিয়ে দেওয়ার পালা, শান্ত তখন বিদায় নেন ৬৩ বলে ৩২ রান করে। এই জুটির ৭১ রান আসে ১২০ বলে।
অভিষিক্ত মাহিদুল ক্রিজে যাওয়ার পর রানের গতি কমে যায় আরও। রান বের করার পথই পাচ্ছিলেন না তিনি। আরেক পাশে হৃদয়ও পারছিলেন না সেভাবে ডানা মেলতে। আবার দীর্ঘসময়ের জন্য উধাও হয়ে যায় বাউন্ডারি।
৮৭ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পরই হৃদয় আউট হয়ে যান জাস্টিন গ্রেভসের অনেক বাইরের বল তাড়া করে।
প্রথম বাউন্ডারির আগে মাহিদুলের রান ছিল ৪৬ বলে ১৬। পরে একটু গতি বাড়াতে পারেন তিনি। মিরাজের শুরুটা সাবলিল হলেও থেমে যান ১৭ রানে। অনেকটা সময় ধৈর্য ধরে ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে খেই হারান মাহিদুল। রোস্টন চেইসকে স্লগ করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান তিনি ৭৬ বলে ৪৬ করে।
এরপর নুরুল হাসান সোহান (৯) দ্রুত ফিরলে আবার একটু বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে রিশাদের ক্যামিও দলকে নিয়ে যায় দ্ইুশর কাছে। দুটি ছক্কা মারেন তিনি গ্রেভস ও জেডেন সিলসের বলে।
শেষ ওভারে তানভির ইসলামের ছক্কায় দুইশ পেরিয়ে যায় দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সিলস তিনটি এবং চেইস ও গ্রিভস দুটি করে শিকার ধরেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভার মেডেন নেন তাসকিন আহমেদ ও তানভির ইসলাম। দুই ওভারের খরার পর দুই ওভারের বর্ষণ। রান আসে সেখানে ২৮। তাসকিনের ওভারে চার ও ছক্কা মারেন ব্র্যান্ডন কিং। তানভিরকে তিন চার এক ছক্কা মারেন আলিক আথানেজ।
রানের গতিতে এরপর রাশ টানতে পারে বাংলাদেশের বোলাররা। তবে দ্বাদশ ওভারে জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। এরপরই আথানেজকে (২৭) জুটি জুটি ভাঙেন রিশাদ।
দ্বিতীয় উইকেটে আরেকটি জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন কিং ও কেসি কার্টি। সেই চেষ্টাও সফল হতে দেননি রিশাদ। দ্বিতীয় শিকার ধরেন তিনি ধুঁকতে থাকা কার্টিকে (৩০ বলে ৯) ফিরিয়ে।
এরপরই ধসে পড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। মূল বাধা হয়ে থাকা কিংকে (৪৪) বিদায় করার পর ওই ওভারেই তিনি ফেরান শেরফোন রাদারফোর্ডকে (০)।
একটু পরই চেইসকে ফিরিয়ে রিশাদ পূরণ করেন পাঁচ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসও ভেঙে পড়ে দ্রুতই।
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ১০ ওভারে ১৬ রান দেওয়া মিরাজ ফেরান গুডাকেশ মোটিকে। দুই অলরাউন্ডার জাস্টিন গ্রেভস ও রোমারিও শেফার্ডকে দাঁড়াতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান।
শেষ উইকেট নিয়ে রেকর্ডের উচ্চতায় উঠে ম্যাচ শেষ করে দেন রিশাদ।
সিরিজের পরের ম্যাচ মঙ্গলবার।