স্পোর্টস ডেস্ক :
শক্তি, সামর্থ্য, ঐতিহ্যে অনেক পিছিয়ে থাকা পুয়ের্তো রিকো খুব একটা লড়াই করতে পারল না আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। র্যাঙ্কিংয়ে দুই দলের মধ্যে যে বিশাল পার্থক্য, সেটা পরিষ্কার ফুটে উঠল মাঠের খেলাতেও। পুয়ের্তো রিকোর জালে গোল উৎসব করল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ইন্টার মায়ামির মাঠ ফোর্ট লডারডেলের চেইস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালের ম্যাচে ৬-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা।
আলবিসেলেস্তেদের হয়ে অ্যালেক্সিস ম্যাক-অ্যালিস্টার ও লাউতারো মার্টিনেজ জোড়া এবং গঞ্জালো মন্টিয়েল একটি গোল করেছেন। আরেকটি গোল হয়েছে পুয়ের্তো রিকো ডিফেন্ডার স্টিভেন এচেভেরিয়ার আত্মঘাতি অবদানে। গোল না পেলেও দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন মেসি। ম্যাচে বল দখল থেকে শট সর্বত্র দাপট দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা। ৬৯ শতাংশ পজেশনের পাশাপাশি মেসি-অ্যালিস্টারদের নেওয়া ২৫ শটের মধ্যে ১১টি লক্ষ্যে ছিল। অন্যদিকে, ৫ শটের মধ্যে ৩টি লক্ষ্যে রাখতে পারে পুয়ের্তো রিকো। সেগুলো দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে আগের ম্যাচে না খেলা অধিনায়ক লিওনেল মেসি এবার খেললেন পুরো ম্যাচই। নিজে জালের দেখা না পেলেও আত্মঘাতী ছাড়া বাকি পাঁচ গোলে ছিল তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব।
তৃতীয় মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। জিওভানি লো সেলসোর কাছ থেকে পেনাল্টি স্পটের কাছে বল পেয়ে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মাক আলিস্তের। চার মিনিট পর প্রায় ৬০ গজ দূর থেকে আচমকা শটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন লেয়ান্দ্রো আন্তোনেতি। তবে দ্রুত পিছিয়ে গিয়ে লাফ দিয়ে কোনোমতে জাল অক্ষত রাখেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
আক্রমণাত্মক ফুটবলে শুরু থেকে পুয়ের্তো রিকোকে চেপে ধরা আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় চতুর্দশ মিনিটে। লিওনেল মেসির শট ক্রসবারে লেগে ফেরার পর নিকো গন্সালেসের ভলিতে গোলমুখে বল পান মাক আলিস্তের। হেড করে অনায়াসে তিনি খুঁজে নেন জাল।
২৩তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গন্সলো মন্তিয়েল। জটলার মধ্য থেকে মেসির দুর্দান্ত দক্ষতায় উঁচু করে বাড়ানো বলে খুব কাছ থেকে ভলিতে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি।৩৬তম মিনিটে আবারও জালের দেখা পান মাক আলিস্তের। মেসির ক্রসে গন্সালেসের হেডে গোলমুখে বল পান হোসে মানুয়েল লোপেস। জটলার মধ্য থেকে শট নেওয়া সম্ভব নয় দেখে তিনি খুজে নেন ফাঁকায় থাকা মাক আলিস্তেরকে। লিভারপুল মিডফিল্ডারের গতিময় শট যায় ঠিকানায়।
৪০তম মিনিটে ডাবল সেভে ব্যবধান কমতে দেননি মার্তিনেস। রিকার্দো রিভেরার জোরাল শট ডাইভ দিয়ে ফেরানোর পর ফিরতি বলে আন্তোনেতির শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক। দুই মিনিট পর ডি বক্সের বাইরে থেকে মেসির ভলি বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে।
বিরতির পর দুটি পরিবর্তন আনে আর্জেন্টিনা। নিকোলাস ওতামেন্দি ও জিওভানি লো সেলসোর জায়গায় নামেন লাউতারো রিভেরো ও আনিবাল মোরেনো। হোসে লোপেসের মতো অভিষেক হলো তাদেরও।
দ্বিতীয়ার্ধেও প্রথম সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। রদ্রিগো দে পলের ক্রসে মেসির হেড চমৎকার রিফ্লেক্সে ঠেকিয়ে দেন পুয়ের্তো রিকো গোলরক্ষক।
বেশিরভাগ সময় ডি বক্সের আশেপাশেই ছিলেন পুয়ের্তো রিকোর ১০ খেলোয়াড়। জটলার মধ্েয প্রায়ই কারো না কারো পায়ে লেগে আটকে যাচ্ছিল শট। কিন্তু ৬৪তম মিনিটে গন্সালেসের শট ডি বক্সে স্টিভেন এচেভারিয়ার পায়ে লেগে দিক পাল্টে জড়ায় জালে!
৭৩তম মিনিটে ডি বক্সের ভেকর থেকে মেসির শট ঠেকান পুয়ের্তো রিকো গোলরক্ষক।
ছয় মিনিট পর স্কোর লাইন ৫-০ করে ফেলেন লাউতারো মার্তিনেস। মেসির ক্রস বুক দিয়ে নামালেও শট করতে পারেননি গন্সালেস। বল পেয়ে যান সামনেই থাকা মার্তিনেস। অনায়াসে জাল খুঁজে নেন ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার।
৮৩তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ান মার্তিনেস। মেসির ব্যাক হিলে বল পেয়ে দূরের পোস্ট ঘেঁষে জাল খুঁজে নেন তিনি। বাকি সময়ে আর জালের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা।
এই ম্যাচটি ছিল আর্জেন্টিনার ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ, যা আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠিত হবে (১১ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত)। এই জয়ের মাধ্যমে স্কালোনির দল তাদের প্রস্তুতিতে আত্মবিশ্বাসী সূচনা পেল।