Dhaka বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মা ইলিশ মাছ রক্ষায় এবং প্রধান প্রজনন মৌসুম হওয়ায় আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি এবং মজুদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে  রাজধানীর সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, মোট ২২ দিন ৩৭ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ জেলের পরিবারকে চাল দেওয়া হবে। পরিবার প্রতি ২৫ কেজি চাল দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি, সংরক্ষণ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে এবং বিশেষ সংরক্ষণ অভিযান চলমান থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর জন্য এক থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডও হতে পারে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে চলতি বছর ভারতে ১২০০ মে. টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৮১ দশমিক ৪৩৮ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১৯ আশ্বিন থেকে ৯ কার্তিক ১৪৩২ (৪ থেকে ২৫ অক্টোবর) আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের ৪ দিন এবং অমাবস্যার পরের ৩ দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন এই অভিযান চলবে। প্রজনন মৌসুমের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, দুটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মসূচি “মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫” নামে পরিচিত। এই সময় নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিক্রি, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করবে।

ভিজিএফ কার্ড পাবে ৬ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবার

জেলেদের জন্য উদ্যোগ সম্পর্কে ফরিদা আখতার বলেন, উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৩৭টি জেলার ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ (চাল) দেওয়া হবে, পরিবার প্রতি বরাদ্দ থাকবে ২৫ কেজি করে চাল, যা পুরো কার্যক্রমে মোট ১৫ হাজার ৫০৩.৫০ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন হবে।

তিনি বলেন, এ অভিযানের সময় জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীতে এই সময় ড্রেজিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হবে। একইসাথে সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ধরে ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

বিএফআরআই’র গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২.৫% মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছেড়েছিল। এর ফলে ৪৪.২৫ হাজার কোটি জাটকা/রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। এই ডিম থেকে উৎপন্ন রেণু বা পোনা (জাটকা) ভবিষ্যতে পরিপক্ক ইলিশে পরিণত হবে।

৫ বছরে ইলিশ আহরণ কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ 

ফরিদা আখতার বলেন, ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ইলিশের মোট আহরণ ৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৮৩ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মোট আহরণ ছিল  ৫ লাখ ১২ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন অর্থাৎ, প্রায় ১০% হ্রাস।

তিনি বলেন, চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি সময়ে সারা দেশের ইলিশের জাটকা ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল বাজারে ইলিশের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ও আগস্ট মাসে ইলিশ আহরণ ২০২৪ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩.২০% এবং ৪৭.৩১% কম হয়েছে। এই দুই মাসে মোট আহরণ হয়েছে ৩৫,৯৯৩.৫০ মেট্রিক টন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২২,৯৪১.৭৮ মেট্রিক টন (৩৮.৯৩%) কম।

গত বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের অভিযানে ২ হাজার১৬৯টি মোবাইল কোর্ট ও ৯ হাজার ৮১৩টি অভিযানের মাধ্যমে ৫৪.৮৬ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ, ৬১২.১১ লাখ মিটার জাল ধ্বংস এবং ৭৫.২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছিল।

ইলিশ রপ্তানি পরিস্থিতি

বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে সম্পন্ন হয়েছিল। ২০১০-১১ সালে ৮,৫৩৮.৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে ৩৫২.৪৯ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছিল।

 ভারতে ইলিশ রপ্তানি

২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ১,৮৭৫ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয়েছিল ১,৮৭৫ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ছিল ১৫৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৪,৬০০ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয় ১,২১১ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ১১৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৩,০০০ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয় ১,৩৭৬ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ১৪৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৩,৫৫০ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয় ৬৬৫ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ৮৫ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ২,৪২০ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয় ৫৭৪ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ৬৮ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ১,২০০ মেট্রিক টন -প্রকৃত রপ্তানি চলমান।

ইলিশ রপ্তানির বর্তমান বাজার মূল্য

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২.৫০ ডলার। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ অনুযায়ী ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১২১.৭২ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী, ৮১,৪৩৮ কেজি ইলিশের বাজার মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৭ হাজার ৯১৭ টাকা। অন্যদিকে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ১৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২২.২৬ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৫৪ টাকা।

আবহাওয়া

৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশের সময় : ০১:২৮:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মা ইলিশ মাছ রক্ষায় এবং প্রধান প্রজনন মৌসুম হওয়ায় আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি এবং মজুদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে  রাজধানীর সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, মোট ২২ দিন ৩৭ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ জেলের পরিবারকে চাল দেওয়া হবে। পরিবার প্রতি ২৫ কেজি চাল দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি, সংরক্ষণ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে এবং বিশেষ সংরক্ষণ অভিযান চলমান থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর জন্য এক থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডও হতে পারে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে চলতি বছর ভারতে ১২০০ মে. টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৮১ দশমিক ৪৩৮ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১৯ আশ্বিন থেকে ৯ কার্তিক ১৪৩২ (৪ থেকে ২৫ অক্টোবর) আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের ৪ দিন এবং অমাবস্যার পরের ৩ দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন এই অভিযান চলবে। প্রজনন মৌসুমের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, দুটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মসূচি “মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫” নামে পরিচিত। এই সময় নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিক্রি, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করবে।

ভিজিএফ কার্ড পাবে ৬ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবার

জেলেদের জন্য উদ্যোগ সম্পর্কে ফরিদা আখতার বলেন, উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৩৭টি জেলার ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ (চাল) দেওয়া হবে, পরিবার প্রতি বরাদ্দ থাকবে ২৫ কেজি করে চাল, যা পুরো কার্যক্রমে মোট ১৫ হাজার ৫০৩.৫০ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন হবে।

তিনি বলেন, এ অভিযানের সময় জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীতে এই সময় ড্রেজিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হবে। একইসাথে সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ধরে ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

বিএফআরআই’র গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২.৫% মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছেড়েছিল। এর ফলে ৪৪.২৫ হাজার কোটি জাটকা/রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। এই ডিম থেকে উৎপন্ন রেণু বা পোনা (জাটকা) ভবিষ্যতে পরিপক্ক ইলিশে পরিণত হবে।

৫ বছরে ইলিশ আহরণ কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ 

ফরিদা আখতার বলেন, ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ইলিশের মোট আহরণ ৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৮৩ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মোট আহরণ ছিল  ৫ লাখ ১২ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন অর্থাৎ, প্রায় ১০% হ্রাস।

তিনি বলেন, চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি সময়ে সারা দেশের ইলিশের জাটকা ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল বাজারে ইলিশের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ও আগস্ট মাসে ইলিশ আহরণ ২০২৪ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩.২০% এবং ৪৭.৩১% কম হয়েছে। এই দুই মাসে মোট আহরণ হয়েছে ৩৫,৯৯৩.৫০ মেট্রিক টন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২২,৯৪১.৭৮ মেট্রিক টন (৩৮.৯৩%) কম।

গত বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের অভিযানে ২ হাজার১৬৯টি মোবাইল কোর্ট ও ৯ হাজার ৮১৩টি অভিযানের মাধ্যমে ৫৪.৮৬ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ, ৬১২.১১ লাখ মিটার জাল ধ্বংস এবং ৭৫.২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছিল।

ইলিশ রপ্তানি পরিস্থিতি

বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে সম্পন্ন হয়েছিল। ২০১০-১১ সালে ৮,৫৩৮.৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে ৩৫২.৪৯ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছিল।

 ভারতে ইলিশ রপ্তানি

২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ১,৮৭৫ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয়েছিল ১,৮৭৫ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ছিল ১৫৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৪,৬০০ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয় ১,২১১ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ১১৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৩,০০০ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয় ১,৩৭৬ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ১৪৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৩,৫৫০ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয় ৬৬৫ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ৮৫ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ২,৪২০ মেট্রিক টন আর প্রকৃত রপ্তানি হয় ৫৭৪ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ৬৮ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ১,২০০ মেট্রিক টন -প্রকৃত রপ্তানি চলমান।

ইলিশ রপ্তানির বর্তমান বাজার মূল্য

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২.৫০ ডলার। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ অনুযায়ী ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১২১.৭২ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী, ৮১,৪৩৮ কেজি ইলিশের বাজার মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৭ হাজার ৯১৭ টাকা। অন্যদিকে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ১৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২২.২৬ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৫৪ টাকা।