Dhaka শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে টিআইবির দাবি ভুল : প্রেস সচিব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩৪:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৮৩ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এই প্রতিনিধিদলের সংখ্যা নিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, তাকে ভুল বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘টিআইবির সাম্প্রতিক বিবৃতি, দুঃখজনকভাবে যা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, এর বিপরীতে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে সদস্যসংখ্যা শেখ হাসিনা আমলের তুলনায় কম তো বটেই, বরং অনেক বেশি লক্ষ্যনির্ভর ও পরিশ্রমীও।’

প্রেস সচিব লেখেন, টিআইবি একটি মর্যাদাপূর্ণ নাগরিক সমাজের সংগঠন, যা স্বচ্ছতার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তাই এটি অত্যন্ত হতাশাজনক যে তারা তথ্য যাচাই না করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পোস্টের ভিত্তিতে বিবৃতি জারি করেছে।

তিনি আরও লেখেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মঞ্চ, যেখানে বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়, সেখানে বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ তুলে ধরা। গত পাঁচ দিনেই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তত এক ডজন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনেরও বেশি রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও রয়েছে।

শফিকুল আলম লেখেন, ‘টিআইবি ভুলভাবে দাবি করেছে যে প্রতিনিধিদলে সদস্য সংখ্যা ১০০ জনের বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটি ৬২, যা গত বছরের ৫৭ জনের চেয়ে সামান্য বেশি। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গত বছরের পরিসংখ্যানে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে সফরসঙ্গী হিসেবে ছয়জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।’

‘এই বছরের প্রতিনিধিদলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই নিরাপত্তা কর্মী, যারা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস-সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছ থেকে ক্রমাগত হুমকির প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিতে লোকবল কিছুটা বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়, সুরক্ষা প্রদানের জন্য অনেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা দৈনিক ১৬ ঘণ্টার শিফটে কাজ করছেন।’

প্রেস সচিব লেখেন, ‘সরকার স্বীকার করে যে, প্রতিনিধিদলের আকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ বছরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এমন এক সময়ে যখন বিভিন্ন মহল সচেতনভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করতে একটি সম্মিলিত প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছে তখন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিসরে দৃঢ় ও সক্রিয় উপস্থিতি কেবল কৌশলগত নয়, অত্যাবশ্যকও।’

‘এটি প্রমাণিত যে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা লাখ লাখ ডলার ব্যয় করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে বিপুল পরিমাণ মিথ্যা তথ্য ছড়াতে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের বিরুদ্ধে লবিং চালাতে, যা অনেক সময় কিছু আন্তর্জাতিক মহলের নীরব সমর্থনেও পরিচালিত হচ্ছে।’

তিনি লেখেন, ‘এই বছরের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ৩০ সেপ্টেম্বর আসন্ন রোহিঙ্গা সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। রোহিঙ্গা সংকট এই অঞ্চলের সবচেয়ে জরুরি মানবিক ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর একটি, যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্রিয় নেতৃত্বকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা পৃথকভাবে সফর করছেন, যারা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সরাসরি অংশ নন। তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ে অংশ নিচ্ছেন।’

শফিকুল আলম আরও লেখেন, ‘বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও এই সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তাদের সহায়তা করার জন্য কয়েকজন কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি একটি স্পষ্ট এবং জোরালো বার্তা দেয় তা হলো, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংসদ নির্বাচন ঐক্যবদ্ধভাবে করা গেলে দেশের অবস্থান অনেক শক্তিশালী হবে : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে টিআইবির দাবি ভুল : প্রেস সচিব

প্রকাশের সময় : ০৮:৩৪:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এই প্রতিনিধিদলের সংখ্যা নিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, তাকে ভুল বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘টিআইবির সাম্প্রতিক বিবৃতি, দুঃখজনকভাবে যা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, এর বিপরীতে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে সদস্যসংখ্যা শেখ হাসিনা আমলের তুলনায় কম তো বটেই, বরং অনেক বেশি লক্ষ্যনির্ভর ও পরিশ্রমীও।’

প্রেস সচিব লেখেন, টিআইবি একটি মর্যাদাপূর্ণ নাগরিক সমাজের সংগঠন, যা স্বচ্ছতার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তাই এটি অত্যন্ত হতাশাজনক যে তারা তথ্য যাচাই না করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পোস্টের ভিত্তিতে বিবৃতি জারি করেছে।

তিনি আরও লেখেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মঞ্চ, যেখানে বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়, সেখানে বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ তুলে ধরা। গত পাঁচ দিনেই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তত এক ডজন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনেরও বেশি রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও রয়েছে।

শফিকুল আলম লেখেন, ‘টিআইবি ভুলভাবে দাবি করেছে যে প্রতিনিধিদলে সদস্য সংখ্যা ১০০ জনের বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটি ৬২, যা গত বছরের ৫৭ জনের চেয়ে সামান্য বেশি। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গত বছরের পরিসংখ্যানে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে সফরসঙ্গী হিসেবে ছয়জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।’

‘এই বছরের প্রতিনিধিদলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই নিরাপত্তা কর্মী, যারা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস-সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছ থেকে ক্রমাগত হুমকির প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিতে লোকবল কিছুটা বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়, সুরক্ষা প্রদানের জন্য অনেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা দৈনিক ১৬ ঘণ্টার শিফটে কাজ করছেন।’

প্রেস সচিব লেখেন, ‘সরকার স্বীকার করে যে, প্রতিনিধিদলের আকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ বছরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এমন এক সময়ে যখন বিভিন্ন মহল সচেতনভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করতে একটি সম্মিলিত প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছে তখন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিসরে দৃঢ় ও সক্রিয় উপস্থিতি কেবল কৌশলগত নয়, অত্যাবশ্যকও।’

‘এটি প্রমাণিত যে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা লাখ লাখ ডলার ব্যয় করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে বিপুল পরিমাণ মিথ্যা তথ্য ছড়াতে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের বিরুদ্ধে লবিং চালাতে, যা অনেক সময় কিছু আন্তর্জাতিক মহলের নীরব সমর্থনেও পরিচালিত হচ্ছে।’

তিনি লেখেন, ‘এই বছরের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ৩০ সেপ্টেম্বর আসন্ন রোহিঙ্গা সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। রোহিঙ্গা সংকট এই অঞ্চলের সবচেয়ে জরুরি মানবিক ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর একটি, যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্রিয় নেতৃত্বকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা পৃথকভাবে সফর করছেন, যারা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সরাসরি অংশ নন। তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ে অংশ নিচ্ছেন।’

শফিকুল আলম আরও লেখেন, ‘বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও এই সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তাদের সহায়তা করার জন্য কয়েকজন কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি একটি স্পষ্ট এবং জোরালো বার্তা দেয় তা হলো, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’