Dhaka শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বান্দরবানের বেইলি ব্রিজগুলো যেন একেকটি মৃত্যু ফাঁদ

বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি : 

বান্দরবান জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে অসংখ্য ছোট-বড় বেইলি সেতু রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এসব সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল এসব সেতু দিয়ে।

আশির দশকে নির্মিত সেতুগুলোতে পাঁচ টনের বেশি যান চলাচল নিষেধ থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে অতি ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। দ্রুত সংস্কার বা নতুন স্থায়ী সেতু নির্মাণ না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্যমতে, সাত উপজেলায় বর্তমানে ১১৪টি বেইলি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি এবং বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে রয়েছে ৬৬টি সেতু। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ৫৪টি।

স্থানীয়রা জানান, আশির দশকে নির্মিত পুরানো বেইলি সেতুগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। তাই সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেতুগুলোতে পাঁচ টনের বেশি ভারী গাড়ি চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। তবে এ নিয়ম মানছেন না কেউই।

প্রতিদিন ২০ টনের বেশি ওজনের কাঠবোঝাই ট্রাক, বাঁশ, বালি ও ইটবাহী ট্রাক চলাচল করছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুগুলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ঘটে যেতে পারে যেকোনো ধরনের বড় দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও সেতুর লোহার পাতাটন উঠে গেছে, কোথাও দেবে গেছে। আবার কোথাও গাছ দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। কিছু সেতুর স্প্রিং পর্যন্ত খুলে পড়েছে। এভাবেই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ।

সিএনজি চালক সরোয়ার আলম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর পাশে লেখা থাকে পাঁচ টনের বেশি গাড়ি চলাচল নিষেধ। কিন্তু প্রতিদিনই ১০-২০ টনের গাড়ি চলাচল করছে। এত ভারী গাড়ি বেইলি সেতুগুলোতে নিরাপদ নয়।

পর্যটকবাহী চাঁদের গাড়ির চালক মংক্যনুং মারমা বলেন, এমনিতেই সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তার ওপর গাছ, বাঁশ, বালি ও ইটবোজাই ভারি ট্রাক গেলে আরো বেশি ঝুঁকি বেড়ে যায়। পর্যটক নিয়ে গাড়ি চালাতে আমাদেরও অনেক কষ্ট হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক বলেন, বেইলি ব্রিজগুলো অনেক পুরনো। ব্রিজের ভাঙা অংশে মোটরসাইকেল বা গাড়ির চাকা পড়লে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাই দ্রুত সংস্কার কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করে জনগণের চলাচলের জন্য সুব্যবস্থার দাবি করছি।

চাঁদের গাড়ি চালক মো. জসীম বলেন, প্রতিবার গাড়ি নিয়ে সেতু পার হওয়ার সময় বুকটা ধড়ফড় করে। কয়েক মাস আগেও রুমা-থানচি সড়কের তিন মাইল এলাকায় সেতুর এক পাশ দেবে গিয়ে চার ঘণ্টা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। প্রতিবছরই কোনো না কোনো ব্রিজ দেবে যায়। বৃষ্টির সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কষ্ট হয়ে যায়। বেইলি ব্রিজগুলো ভেঙে আরসিসি ব্রিজ করলে মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।

এ বিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বান্দরবান সড়ক বিভাগের অধীনে ৬৬টি বেইলি সেতু রয়েছে। বেশ কিছু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা প্রতিবছর সেতুগুলোকে মেরামত করি। সেতুগুলোর ক্ষেত্রে পাঁচ টনের অধিক ভারি গাড়ি চলাচল করার কথা না কিন্তু নানান বাস্তবতার কারণে এসব সেতুতে ভারি গাড়ি চলাচল করছে, ঝুঁকিও বেশি বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই বেইলি সেতুগুলোকে স্থায়ী সেতুতে রূপান্তরিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এরইমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় দুটি সড়কে ২২টি বেইলি সেতুর পরিবর্তে আরসিসি স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ করা হবে। অবশিষ্ট সেতুগুলোর জন্য চট্টগ্রাম জোন থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অনুমোদন করলে ধাপে ধাপে সব বেইলি সেতুর পরিবর্তে স্থায়ী আরসিসি সেতু নির্মিত হলে এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগটা নিরবিচ্ছিন্ন থাকবে এবং জনগণের দুর্ভোগ কমে আসবে। সড়কের নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পাবে।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশ সদর দফতরের ব্যাখ্যা

বান্দরবানের বেইলি ব্রিজগুলো যেন একেকটি মৃত্যু ফাঁদ

প্রকাশের সময় : ০৩:১৯:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি : 

বান্দরবান জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে অসংখ্য ছোট-বড় বেইলি সেতু রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এসব সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল এসব সেতু দিয়ে।

আশির দশকে নির্মিত সেতুগুলোতে পাঁচ টনের বেশি যান চলাচল নিষেধ থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে অতি ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। দ্রুত সংস্কার বা নতুন স্থায়ী সেতু নির্মাণ না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্যমতে, সাত উপজেলায় বর্তমানে ১১৪টি বেইলি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি এবং বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে রয়েছে ৬৬টি সেতু। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ৫৪টি।

স্থানীয়রা জানান, আশির দশকে নির্মিত পুরানো বেইলি সেতুগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। তাই সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেতুগুলোতে পাঁচ টনের বেশি ভারী গাড়ি চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। তবে এ নিয়ম মানছেন না কেউই।

প্রতিদিন ২০ টনের বেশি ওজনের কাঠবোঝাই ট্রাক, বাঁশ, বালি ও ইটবাহী ট্রাক চলাচল করছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুগুলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ঘটে যেতে পারে যেকোনো ধরনের বড় দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও সেতুর লোহার পাতাটন উঠে গেছে, কোথাও দেবে গেছে। আবার কোথাও গাছ দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। কিছু সেতুর স্প্রিং পর্যন্ত খুলে পড়েছে। এভাবেই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ।

সিএনজি চালক সরোয়ার আলম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর পাশে লেখা থাকে পাঁচ টনের বেশি গাড়ি চলাচল নিষেধ। কিন্তু প্রতিদিনই ১০-২০ টনের গাড়ি চলাচল করছে। এত ভারী গাড়ি বেইলি সেতুগুলোতে নিরাপদ নয়।

পর্যটকবাহী চাঁদের গাড়ির চালক মংক্যনুং মারমা বলেন, এমনিতেই সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তার ওপর গাছ, বাঁশ, বালি ও ইটবোজাই ভারি ট্রাক গেলে আরো বেশি ঝুঁকি বেড়ে যায়। পর্যটক নিয়ে গাড়ি চালাতে আমাদেরও অনেক কষ্ট হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক বলেন, বেইলি ব্রিজগুলো অনেক পুরনো। ব্রিজের ভাঙা অংশে মোটরসাইকেল বা গাড়ির চাকা পড়লে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাই দ্রুত সংস্কার কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করে জনগণের চলাচলের জন্য সুব্যবস্থার দাবি করছি।

চাঁদের গাড়ি চালক মো. জসীম বলেন, প্রতিবার গাড়ি নিয়ে সেতু পার হওয়ার সময় বুকটা ধড়ফড় করে। কয়েক মাস আগেও রুমা-থানচি সড়কের তিন মাইল এলাকায় সেতুর এক পাশ দেবে গিয়ে চার ঘণ্টা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। প্রতিবছরই কোনো না কোনো ব্রিজ দেবে যায়। বৃষ্টির সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কষ্ট হয়ে যায়। বেইলি ব্রিজগুলো ভেঙে আরসিসি ব্রিজ করলে মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।

এ বিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বান্দরবান সড়ক বিভাগের অধীনে ৬৬টি বেইলি সেতু রয়েছে। বেশ কিছু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা প্রতিবছর সেতুগুলোকে মেরামত করি। সেতুগুলোর ক্ষেত্রে পাঁচ টনের অধিক ভারি গাড়ি চলাচল করার কথা না কিন্তু নানান বাস্তবতার কারণে এসব সেতুতে ভারি গাড়ি চলাচল করছে, ঝুঁকিও বেশি বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই বেইলি সেতুগুলোকে স্থায়ী সেতুতে রূপান্তরিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এরইমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় দুটি সড়কে ২২টি বেইলি সেতুর পরিবর্তে আরসিসি স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ করা হবে। অবশিষ্ট সেতুগুলোর জন্য চট্টগ্রাম জোন থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অনুমোদন করলে ধাপে ধাপে সব বেইলি সেতুর পরিবর্তে স্থায়ী আরসিসি সেতু নির্মিত হলে এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগটা নিরবিচ্ছিন্ন থাকবে এবং জনগণের দুর্ভোগ কমে আসবে। সড়কের নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পাবে।