নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোনো ব্যক্তি বা দলের কথায় নির্বাচন বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ইপি-পেনশন উদ্বোধন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা করছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
কোনো ব্যক্তি বা দলের কেউ বললেই নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে। আগামী নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। তবে এটা নির্ভর করবে রাজনীতিবিদদের ওপর।
নির্বাচন মানেই কালোটাকার ছড়াছড়ি। বিশেষ প্রেক্ষাপটের অন্তর্বর্তী সরকার কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য কালো টাকার উৎস বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এটি নিশ্চিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ও সহায়তা করবে। তবে এ জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন প্রয়োজন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, নতুন করে আরও ১০১ জন অর্থ পাচারকারী শনাক্ত হয়েছে। প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা করে বিদেশে পাচার করেছে। এর আগে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত ১১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল; যাদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার মামলা করেছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শুধুমাত্র একটি ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ খেলাপি। ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তার বন্ধুরা সব টাকা নিয়ে চলে গেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত এক বছরের অর্থনীতি পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সব সূচক নেগেটিভ ছিল। এখন সব সূচকই পজিটিভ হয়েছে। সুশাসনের ঘাটতি, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির কারণে আর্থিক খাত খাদের কিনারায় ছিল, সেখান থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
টাকা ফেরত আনার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বড় ধরনের ১১টি মামলা হয়েছে এবং পাচারের স্থান শনাক্ত হয়েছে। ১২টি দেশের সঙ্গে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএলএ) করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং আইনজীবীর মাধ্যমে টাকাও ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
উপদেষ্টা বলেন, কর আহরণ আশাতীত নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থার ওপর কর আদায় নির্ভর করে। তবুও ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাংক খাত সংস্কার কার্যক্রম উল্টে দিলে আমানতকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা ও মানবসম্পদ ঠিক করা আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
আগামী নির্বাচনে কালো টাকা রোধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কালো টাকার ক্ষেত্রে দুইটা বিষয় হলো উৎস আর প্রসেস। উৎসটা কিন্তু আগের চেয়ে মোটামোটি বন্ধ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগে তো ব্যাংকের মালিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক, নিউজ পেপারের মালিক, ফ্লাটের মালিক সব একজনই। কিন্তু এখন তো এটা হচ্ছে না। মোটামুটি এখন একটু চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবসময় বলি অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর। রাজনীতিবিদরা যদি উৎসাহ দেন টাকা-পয়সা দিয়ে নমিশনেশন দিবেন, ভোট দেবেন, তাহলে আমি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তো কিছুই করতে পারব না।