সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি :
জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সংগঠক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোন দল বা অপশক্তি অরাজকতা করলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ক্যাম্পেইনে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, আগামী নির্বাচনে যেকোনো দল, কোনো গোষ্ঠী বা যেকোনো অপশক্তি বিন্দু মাত্র ক্ষমতার অপব্যবহারে চিন্তা করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের যেকোনো একটি সেন্টারে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হলে পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের ক্ষেত্র হবে।
তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল এই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আসছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা নাহিদ ইসলাম যিনি এই অভ্যুত্থানের ঘোষক, তাকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি যেন পুরো বাংলাদেশকে আবার আমরা সামনের সারিতে থেকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। সেজন্য আমাদের নাহিদ ইসলাম যেন ওই ক্ষমতার মন্ত্রণালয় ছেড়ে আবারও জনতার কাতারে এসে দাঁড়ান। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্টের আগে এ দেশে যারা চাঁদাবাজি, দখলবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতো সেই অরাজকতা এখনো বন্ধ হয়নি। অন্য কোন দল, অন্য কোন অপশক্তি সেই চাঁদাবাজি, দখলবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদের নতুন দল হবে জনগণের দল।
সারজিস আলম বলেন, সোনারগাঁয়ের শিল্প নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব যা ছিল তাই আছে। বিভিন্ন প্লট থেকে শুরু করে যতো টাকার ভাগবাটোয়ারা হতো এখন তার চেয়ে কম হয়না বরং আরও বেশি হয়। মনে রাখতে হবে অভ্যুত্থানের লড়াইয়ে ৫-৬ জুনে আমরা ৫০০ জনও রাজপথ ছিলাম না। কিন্তু ৫ আগস্টে আমরা ৫ কোটি মানুষ পুরো বাংলাদেশের রাজপথে নেমেছিলাম। এ জন্য সময় দিতে হবে, সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারি মাসে আসছে। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বিগত ১৬ বছর যে চর্চাগুলো ছিল আমরা এখন আবার সে চর্চাগুলো নতুন করে দেখতে পারছি। স্পষ্ট কথা যারা এসব চর্চাগুলো করে এসেছে তাদের রক্তে ওই চর্চা একদম মিশে গেছে। সেই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে যারা এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
সারজিস আলম বলে, আমাদের লড়াইয়ে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। খুনি হাসিনা নিজে বাঁচার জন্যে এবং পরিবারকে বাঁচানোর জন্যে পালালেও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে যাননি। এককথায় খুনি হাসিনা তার দলীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগকে টিসুর মতো ব্যবহার করেছেন।
তিনি বলেন, এখন অনেকে রাজনীতি করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে। এখন চেনার সময় হয়েছে। বিগত ১৬-১৫ বছরে কোন নেতাকে কাছে পেয়েছেন এবং কোন নেতা আত্মগোপন কিংবা দেশের বাহিরে থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বহু নেতা আছে যাদের বিগত ১৬ বছর জনগণ খুঁজেও পায়নি। তারা এখন নতুন করে নতুন রূপে এ বাংলাদেশে এসেছেন। তারাই এখন আপনাদের মাঝে হাত গোলাচ্ছেন। কঠিন সময়ে যাদের পাশে পাওয়া যায়নি তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেওয়ার দয়া দেখাবেন না।
যদি তা দেখান তাহলে শেখ হাসিনা যেভাবে কঠিন সময়ে তার নেতাদের ফেলে পালিয়েছে আপনাদের অবস্থাও একই হবে। আপনাদের ফেলে অনেক নেতা আবার জান নিয়ে পালাবেন।
তিনি বলেন, আমাদের একটি লড়াইয়ের আন্দোলনে খুনি হাসিনা ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। তার থেকে আমাদের অসংখ্য শিক্ষা নেওয়ার আছে। নিজে পালানোর আগে পরিবারকে সেফট এক্সিট দিয়েছে। অথচ সে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করে বিপদের মুখে রাস্তাঘাটে ফেলে পালিয়ে গেছে।
সারজিস বলেন, পনেরো-ষোলো বছরে যখন আপনাদের কঠিন সময় ছিল তখন কোনো নেতাকে আপনি পেয়েছেন, আবার কোনো নেতা বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থেকে কিংবা দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এমন অনেক নেতাকর্মী ছিল যাদের বিগত ১৬ বছরে খুঁজে পাননি। তারা এখন নতুন করে বিভিন্ন রূপে এই বাংলাদেশে এসেছে। তারা এখন মাথায় হাত বোলাচ্ছে। যাদের আপনাদের কঠিন সময়ে পাশে পাননি। অনুরোধ করি, এখন সুবিধাজনক সময়ে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেওয়ার মতো এই অমানসিকতা দেখাবেন না। যদি দেখান- তাহলে হাসিনা যেভাবে নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে পালিয়েছে- আপনাদের অবস্থাও একই হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও শাকিল সাইফুল্লাহর সঞ্চালনায় এ ক্যাম্পেইনে আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সোনারগাঁয়ের শহীদ মেহেদীর বাবা ছানাউল্লাহ ও শহীদ ইমরানের মা কোহিনূর আক্তার এবং আন্দোলনে নির্যাতিত ছাত্র শাকিল আহমেদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের শত শত শিক্ষার্থী ও নেতারা।