আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের জন্য অনেক ভালো কাজ করেছেন। তাই তাঁকে প্রয়োজনে আমৃত্যু ভারতে থাকতে দেওয়া উচিত। এমনটাই মন্তব্য করেছেন সাবেক কূটনীতিক, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা মণি শংকর আইয়ার।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে ১৬তম এপিজে কলকাতা সাহিত্য উৎসবের সাইডলাইনে বার্তাসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
আইয়ার বলেন, তিনি খুশি যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি গত মাসে ঢাকায় গিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই আলোচনা অব্যাহত রাখা উচিত ও ভারতের উচিত বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপন করা।
হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশের দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের জন্য অনেক ভালো কিছু করেছেন, আমি আশা করি এই বিষয়ে আমরা কখনোই দ্বিমত করব না। আমি খুশি যে, তাকে (ভারতে) আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি যতদিন তিনি চান আমাদের তাকে এই আশ্রয় দেওয়া উচিত। এমনকি যদি তাকে সারা জীবনের জন্যও রাখতে হয়, তারপরও (তাকে রেখে দেওয়া উচিত)।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে আইয়ার বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা সত্য হলেও তা অতিরঞ্জিত। অনেক সময় এই সংঘাতগুলো রাজনৈতিক মতভেদের জন্য হয়ে থাকে।
আইয়ার বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা সত্যি, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা শেখ হাসিনার সমর্থকদের ওপর রাজনৈতিক হামলা। তিনি বলেন, ‘হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা সত্য হলেও, অনেক ক্ষেত্রে এগুলো রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে সৃষ্ট।’
৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তারপর থেকেই তিনি সেখানেই বসবাস করছেন।
এর আগে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে আইয়ার বলেন, পাকিস্তানের মানুষ ভারতীয়দের মতোই, শুধু ভাগ্যের দোষে তারা আলাদা দেশে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন তামিল, আমার স্ত্রী পাঞ্জাবি। আমাদের মধ্যে যে পার্থক্য, তার চেয়েও কম পার্থক্য আমার স্ত্রীর সঙ্গে একজন পাকিস্তানি পাঞ্জাবির।’
নরেন্দ্র মোদির সরকারকে আক্রমণ করে আইয়ার বলেন, ‘আমাদের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সাহস আছে, কিন্তু এই সরকারের টেবিলে বসে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার সাহস নেই।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান একদিকে সন্ত্রাস ছড়ায়, অন্যদিকে নিজেরাও সন্ত্রাসের শিকার। তারা ভেবেছিল তালেবানকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আনতে পারবে। কিন্তু এখন তাদের সবচেয়ে বড় হুমকি আফগানিস্তানের সেই তালেবানই।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে গোপন আলোচনার পথ তৈরি করা। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ একে চার দফা চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। মনমোহন সিং দেখিয়েছিলেন সামরিক সরকারের সঙ্গেও আলোচনা সম্ভব। আমাদের উচিত তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।’