Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মূল হোতা ওসি প্রদীপ: মেজর সিনহা হত্যা পরিকল্পিত

ফাইল ছবি

পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে র‌্যাব। চার্জশিটে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

থানায় বসেই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে উঠে এসেছে র‌্যাবের তদন্তে।

এর আগে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সিনহা হত্যা মামলায় র‌্যাবের চার্জশিট প্রস্তুত। আজ (রোববার) কক্সবাজারের আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মেজর সিনহা হত্যার ঘটায় র‌্যাবের তদন্তে ওসি প্রদীপের নামই মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে। জানা গেছে, টেকনাফ থানায় বসেই তার নেতৃত্বে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সিনহা হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ওসি প্রদীপসহ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোট ব্যক্তির সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে বর্তমানে ১৪ জনই রয়েছেন কারাগারে।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন, তাদের ওসি প্রদীপ ছাড়াও রয়েছেন— বাহারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের (ঘটনাস্থল) পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং স্থানীয় তিন জন।

গত ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি করে।

এ ঘটনা তদন্তে গত ১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে একই দিন আরেক চিঠিতে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ‘আরও শক্তিশালী’ চার সদস্যের কমিটি করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন : চাচাকে হত্যার কৌশল টিভি সিরিয়াল দেখেই রপ্ত করে ভাতিজা

একাধিক দফায় সময় নেওয়ার পর গত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে ৮০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন দাখিল করে কমিটি।

ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলি ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ ৯ পুলিশকে আসামি করা হয়।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকমান্ডো ট্রেনিংপ্রাপ্ত সাবেক এসএসএফ সদস্য। দুই বছর আগে তিনি সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। তিনি ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তার সঙ্গে আরও তিন সঙ্গী ছিলেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতেই তিনি নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের কথা জানিয়ে ওই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। তবে ঘটনার যে বিবরণ পুলিশ দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

মূল হোতা ওসি প্রদীপ: মেজর সিনহা হত্যা পরিকল্পিত

প্রকাশের সময় : ০৭:১৭:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে র‌্যাব। চার্জশিটে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

থানায় বসেই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে উঠে এসেছে র‌্যাবের তদন্তে।

এর আগে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সিনহা হত্যা মামলায় র‌্যাবের চার্জশিট প্রস্তুত। আজ (রোববার) কক্সবাজারের আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মেজর সিনহা হত্যার ঘটায় র‌্যাবের তদন্তে ওসি প্রদীপের নামই মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে। জানা গেছে, টেকনাফ থানায় বসেই তার নেতৃত্বে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সিনহা হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ওসি প্রদীপসহ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোট ব্যক্তির সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে বর্তমানে ১৪ জনই রয়েছেন কারাগারে।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন, তাদের ওসি প্রদীপ ছাড়াও রয়েছেন— বাহারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের (ঘটনাস্থল) পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং স্থানীয় তিন জন।

গত ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি করে।

এ ঘটনা তদন্তে গত ১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে একই দিন আরেক চিঠিতে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ‘আরও শক্তিশালী’ চার সদস্যের কমিটি করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন : চাচাকে হত্যার কৌশল টিভি সিরিয়াল দেখেই রপ্ত করে ভাতিজা

একাধিক দফায় সময় নেওয়ার পর গত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে ৮০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন দাখিল করে কমিটি।

ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলি ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ ৯ পুলিশকে আসামি করা হয়।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকমান্ডো ট্রেনিংপ্রাপ্ত সাবেক এসএসএফ সদস্য। দুই বছর আগে তিনি সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। তিনি ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তার সঙ্গে আরও তিন সঙ্গী ছিলেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতেই তিনি নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের কথা জানিয়ে ওই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। তবে ঘটনার যে বিবরণ পুলিশ দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।