নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না বলে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২৮ আগস্ট) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ যাদেরকে পছন্দ করে না, তাদের কথা কী আর বলবো! আমরা জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছি। আমরা তো নির্বাচন চাইবোই। নির্বাচন ছাড়া তো অন্য রাজনীতি বিএনপি করবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দেয়ার কথা বলেছি (নির্বাচন নিয়ে)। আমরা তো ভুলে যাইনি ১/১১ কারা বিরাজনীতি করেছে। তারা বলেছিল, রাজনীতি লাগবে না। এ জন্য যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি করে। উদ্বেগ তৈরি হয়। মানুষ এখানে গণতন্ত্র চায়। ভোট চায়। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কীভাবে চলবে।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ায় এই বন্যা দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। আমরা সাধ্যমতো বন্যার্তদের মাঝে সহায়তা করছি। একটি কেন্দ্রীয় ত্রাণ সেলও গঠন করা হয়েছে। চাল, ডাল, তেল, ওষুধ, কাপড়, শুকনা খাবারসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক কোটি টাকা আমাদের নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দিয়ে তারা ত্রাণ কিনে সহায়তা করছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন থাকছেনা। বরং সীমিতভাবে কর্মসূচি পালিত হবে। ১ সেপ্টেম্বর কেবল শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
তিনিও আরও বলেন, একটি দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। যেখানে দেশের মানুষ ও ছাত্রজনতার আন্দোলনে হতাহতদের জন্য দোয়া করা হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাতে দ্রুত দেশে ফিরে আসতে পারেন সে জন্য দোয়া করা হবে। সেসব টাকা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।
ফখরুল বলেন, কিছু কিছু জায়গায় দুর্বৃত্তরা অপকর্ম করে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। আমি স্পষ্ট করে বলছি যে, আমরা কোনো দুর্বৃত্তপনা বা অপরাধ বরদাশত করা হবে না। যারা-ই এসব করছে, তাদের বিরুদ্ধে দল ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢালাওভাবে মামলা যাতে না হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলবো- আপনারা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করুন। এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদেরও আহ্বান জানাব, এমন কোনো মামলা করবেন না যাতে সারবস্তু থাকবে না।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল পার করছি। এ অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ অন্তর্র্বতী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। তা না হলে কিন্তু হবে না। মনে রাখতে হবে গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া পরিবর্তন হয় না। এ সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ ছাত্র-জনতার বিপ্লব নস্যাতের চক্রান্ত হচ্ছে। ভারত থেকে কিছু জিনিস অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। বিএনপির বিরুদ্ধে ফের পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত হচ্ছে। অথচ গত ১৫ বছরে বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মী নির্যাতন নিপীড়নের শিকার। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশান্তরিত করা হয়েছে। এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি বিগত সরকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত সংলাপে বসা উচিত বলে তিনি জানান।
জামায়াত-শিবিরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়েও এদিন কথা বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই। যারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে তারা রাজনীতি করবে এটা তাদের অধিকার।