আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় নিন্দা জানাতে মালয়েশিয়াকে চাপ দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে তাদের সেই চাপের মুখে মাথা নত না করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মালয়েশিয়ার সংসদে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, বিভিন্ন বৈঠকে হামাসের প্রতি নিন্দা জানাতে পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলো মালয়েশিয়াকে বারবার চাপ দিচ্ছে। তবে আমি বলেছি যে নীতিগতভাবে হামাসের সঙ্গে আগে থেকেই আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। আর তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা তাদের এমন মনোভাবের সঙ্গে একমত নই। কারণ হামাস গাজায় অবাধ নির্বাচনে বিজয়ী। গাজাবাসী তাদের নির্বাচিত করেছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হলেই শান্তিরক্ষা অথবা মানবিক মিশনে ফিলিস্তিনে মালয়েশীয় সৈন্য মোতায়েন করা সম্ভব। ঐকমত্য ছাড়া মালেশিয়ার শান্তিরক্ষী অথবা মানবিক সহায়তা বহনকারী উড়োজাহাজ মাটিতে নামার অনুমতি পাবে না।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, মালয়েশিয়ার কয়েকটি দল দাবি করছে, আমরা আমাদের সামরিক বাহিনী পাঠাতে অস্বীকার করেছি। আমাদের সামরিক নেতারাও বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এটি সহজ সিদ্ধান্ত নয়। আশা করবো, আরও ভালো বোঝাপড়া হবে। মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।
বক্তব্যে ইসরায়েলিদের হাতে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার জন্য মালয়েশিয়ার সবাইকে প্রার্থনা করার এবং মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সেখানে অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, আমি আসিয়ান এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী বৃহস্পতিবার রিয়াদ রওয়ানা হবো। তবে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আমার সফর শনিবার পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, সেখানে আমি সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, তুরস্কের মতো পক্ষগুলোর সঙ্গে (সংঘাত নিয়ে) আরেকটি আলোচনায় বসবো।
মূলত মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত সপ্তাহে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামের একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়ে ইসরায়েল।
হামাসের এই হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১৪০০ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্যও রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার ইসরায়েলি।
পরে হামাসের হামলার প্রতিশোধে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৭০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ৯ হাজার ৬০০ জন।
রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলে হামলার পর থেকে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকে পশ্চিমা এবং ইউরোপীয় দেশগুলো বারবার মালয়েশিয়াকে হামাসের নিন্দা করতে বলেছে বলে আনোয়ার জানিয়েছেন। তবে সেসব বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ দেননি তিনি।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ মালয়েশিয়া দীর্ঘকাল ধরে ফিলিস্তিনের সোচ্চার সমর্থক এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিরোধের সমাধান হিসেবে দুটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলে এসেছে। এছাড়া ইসরায়েলের সাথে মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
অতীতে হামাসের শীর্ষ নেতারা প্রায়ই মালয়েশিয়া সফর করেছেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রীদের সাথে দেখা করেছেন। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ২০১৩ সালে হামাসের আমন্ত্রণে ইসরায়েলের অবরোধ অমান্য করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সফর করেছিলেন।