নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে দেশে কোনো কাঁচা রাস্তা থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণভবনে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি জানি, এখনো অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। ইনশাল্লাহ, আবার যদি জনগণের সেবার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আমরা সেগুলোও করে দেব। প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের মতো গড়ে উঠবে। আমার গ্রাম, আমার শহর সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাটা বজায় রাখতে পেরেছি, যার জন্য গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমি জানি এখনো অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। আবার যদি জনগণের সেবা করার সুযোগ পাই, নিশ্চয় আমরা সেগুলো করে দেব। কারণ শহরের মতো করে প্রত্যেকটা গ্রাম গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, টানা তিন বার সরকারে এসেছি। ২০০৯ এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে, এটা স্থিতিশীল পরিবেশ রেখে আমরা উন্নয়নের কাজ করতে পেরেছি, গণতান্ত্রিক ধারাটা বজায় রাখতে পেরেছি, যার জন্য একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি।
আমার গ্রাম, আমার শহর গঠনে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ আজকে যে পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের অভিযোগ দিয়েছিল, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজের অর্থে করবো, সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা রেললাইনও করে দিয়েছি। এখন আর যোগাযোগের অসুবিধা নেই।
তিনি বলেন, আজকের উন্নয়নটা দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল। এটা যেন আর নষ্ট না করতে পারে। কারণ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত যতটা এগিয়ে ছিলাম, বিএনপি-জামায়াত জোট সেটা পিছিয়ে দিয়েছিল। ২০০৯-২৩ বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে। জনগণের কাছে আমার এটাই আহ্বান থাকবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে এসডিজি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উচ্চাসনে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয় নাই, ব্যর্থ হবে না, ব্যর্থ হতে দেব না।
মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের দাঁড়াতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ যেন মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত না হয়, সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। সরকার মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রার্থণালয় সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে বলেও জানান সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন মশার উপদ্রব, ডেঙ্গুর উপদ্রব। এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সবারই কিছু করণীয় আছে। আপনারা নিশ্চয়ই যার যার নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে মশারির ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের সচেতন হতে হবে, শুধু মশা মেরেই শেষ করা যাবে না। নিজেদেরও সচেতনা সৃষ্টি করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে খালেদা জিয়া। আজকে কৃষকের ঘরে সার পৌঁছে যায়। তাদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দিই।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ৯৬ সালে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল। পরে বিএনপির আমলে কমে গেছে সেটা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখন ২৫ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পায়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল সেন্টার হয়েছে। ইনকিউবেটর, হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশের ৭৩ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ঘরে ঘরে মোবাইল ফোনে কথা বলে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। নানাভাবে তাদের এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছি। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা দিচ্ছি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি ও তাদের ভাতাও দিচ্ছি। ৫ কোটি মানুষের পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। এটা দিয়ে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনকের আদর্শ নিয়ে সংবিধানে বর্ণিত পন্থায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌর ও সিটি করপোরেশন আইন করে আমরা এগুলো নিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, ঘরে বসে চাকরির আবেদনসহ যাবতীয় সেবার কাজ করতে পারে মানুষ। অনলাইনে কেনা-বেচাসহ সব কিছু হচ্ছে। আমরা তরুণ-তরুণীদের ফ্রিল্যান্সিং শিখাচ্ছি। সে এই ট্রেনিং নিয়ে বিদেশেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নোত দেশের মর্যাদা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ক্ষমতায়ন করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। তখনই এলো আঘাত। জাতির পিতা সপরিবারে শাহাদাৎ বরণ করতে হয়। হারিয়েছিলাম বাবা-মা ও ভাইবোন। পেয়েছি বিশাল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের মানুষই আমার আপনজন। তারাই আমার সব শক্তি।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পরে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আমাদের চালু আছে। ৫১ লাখ জন উপকারভোগী। তাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। বর্গাচাষিদের আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি বিনা জামানতে। বিনা জামানতে বর্গাচাষিরা কখনো কৃষি ঋণ পেত না। তাতে তারা জমি চাষ করতে পারে। মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে আর ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা তৃণমূলের মানুষের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা এটা আপনার আমার সকলের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যথাযাথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে আপনারা এগিয়ে যাবেন। কারণ একবার যখন মানুষ আপানাদের ভোট দিয়েছে, তারা যেন আবার ভোট দিতে পারে সেই আস্থা বিশ্বাস আপনাদের অর্জন করতে হবে।
গণভবনে উপস্থিত সারাদেশের কয়েক হাজার জনপ্রতিনিধির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আপনাদের উপস্থিতিতে গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। তৃণমূল মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আপনারা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, আপনাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, জাতির পিতা কেন্দ্র থেকে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ক্ষমতাসীন করে জনগণের দৌরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সবার মাঝে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে এল চরম আঘাত। এরপরই থেমে গেল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। পরবর্তী সময়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সুযোগ পায়। পিতা, মাতা, ভাই সব হারিয়েছিলাম। বিদেশে আমি ও আমার ছোটবোনকে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। আমার ছোটবোন রেহানার পাসপোর্টটিও জিয়াউর রহমান দেয়নি। সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল তবুও রিনিউ করে দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার জন্য আমাদের নিজের নাম ব্যবহার করতে পারতাম না। যারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ৭১-এ যেমনিভাবে আশ্রয় দিয়েছে, পরবর্তীতেও আশ্রয় দিয়েছে। এরপর ২১ বছর পর জনগণের শক্তি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছি। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি করেছিল। আওয়ামী লীগের প্রতি ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। হারিয়েছিল মা, বাবা, ভাই… আর পেয়েছি বিশাল জনগোষ্ঠীর পরিবার। বাংলাদেশের মানুষই আমার আপনজন এবং তারাই আমার পরিবার।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইবরাহীম।