নিজস্ব প্রতিবেদক :
জামায়াত মাঠে নামেনি, বিএনপি তাদেরকে অগ্নিসন্ত্রাসের জন্য মাঠে নামিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (১০ জুন) বিকালে রাজধানীর উত্তরার নিকুঞ্জ-২ এলাকায় মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জামায়াত মাঠে নামেনি, তাদের অগ্নিসন্ত্রাস করতে মাঠে নামিয়েছে বিএনপি। এর মাধ্যমে বিএনপি আগুন-সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মানুষ মারবে, বাস পোড়াবে, স্কুল শিক্ষকের চোখ তুলে নেবে!
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুতের পরিবর্তে খাম্বা আসবে, হাওয়া ভবন তৈরি হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা তো তাদের (বিএনপি) ডাকছি না। সাধিলে আবার খাইবো। তত্ত্বাবধায়ক মানলে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে, পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করলে কার সঙ্গে বসবে? সরকার পদত্যাগ করলে কি বাতাসের সঙ্গে সংলাপ করবে? মির্জা ফখরুল অবান্তর কথা বলে যাচ্ছে। তার কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাইলে বিএনপির মাথা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও সংসদের বিলুপ্তি- এ তিন ভূত নামাতে হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুল জ্যোতিষীর মত কথা বলে, ভোট হলে দশটিও পাবেনা। আগে বলেছিল একশো বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে না। কথাটি মিথ্যা হয়েছিল। যে ঐক্যে মানুষ নেই সে আন্দোলনে রূপ নিতে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ৩০টি আসন পাবে না। সেই নির্বাচনে তারাই ৩০টি আসন পেয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি অগণিত নারীর কোল খালি করেছে। তারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে। অর্থপাচারকারী, ভোটচোর, আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন বানানো বিএনপির বিরুদ্ধে খেলা হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি খেলার মাঠে না এসে লাফালাফি শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ যখন খেলার মতো খেলতে নামবে, তখন বিএনপি পালানোর সুযোগ পাবে না। বিএনপির আন্দোলন করার মতো কোনো নেতা নেই। তাদের দলের শীর্ষ এক নেতা হাসপাতালে, আরেক নেতা মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
বিএনপির পলাতক নেতা তারেক রহমানের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণআন্দোলন চাইলে, গণআন্দোলনের ঢেউ চাইলে সৎ সাহস থাকলে আসুন, রাজপথে আসুন, মোকাবিলা হবে- কে হারে, কে জেতে, দেখা যাবে। আমরা মাঠে থাকবো, মোকাবিলা করবো।
তিনি বলেন, তারেক অর্থপাচার করে পালিয়েছে। সৎ সাহস হলে দেশে আসুক। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি আরও হবে, যা হবে রাজপথে নির্ধারণ হবে, টেমস নদীর পার হতে নয়।
বক্তব্যে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এতই যদি বুকে বল থাকে, নির্বাচনে আসেন। খেলা হবে, আসেন খেলার মাঠে। খেলার মাঠে না এসে ফাউল শুরু করেছেন, লাফালাফি বন্ধ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ খেলার মতো খেলতে নামলে, আপনাদের পালানোর পথ থাকবে না।
সমাবেশে বিএনপির চলমান আন্দোলন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সম্পাদক। তিনি বলেন, যে দলে ঐক্য নেতা, মানুষ নাই, সেই দলের কর্মসূচি আন্দোলনে রূপ নিতে পারে না। আন্দোলনে নেতা লাগে, বিএনপির এক নেতা হাসপাতালে, আরেক নেতা লন্ডনে। বিএনপি সমাবেশের নামে নাশকতা সৃষ্টি করতে চায়।
পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির শরিক ৫২ দল। ৫২ দলের কতদল আছে ফখরুল সাহেব? এটা জগাখিচুড়ি জোট। বিএনপি নেতারা আদালত না মানার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছে। দণ্ডপ্রাপ্ত তারেকের বক্তব্য প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফাউল করলে খবর আছে, খেলা হবে প্রস্তুত হয়ে যান।
আন্দোলনে নেতা লাগে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যে ঐক্যে নেতা নেই, মানুষ নেই- সেই আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেবে না। বিএনপির দুই নেতাই দণ্ডিত। একজন হাসপাতালে, একজন পালিয়ে লন্ডনে। প্রতিদিন সেখান থেকে অনলাইনে ফরমায়েশ দিচ্ছে। আদালতের রায় না মেনে টেমস নদীর ওপার থেকে ফরমায়েশ পাঠাচ্ছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের করছে আওয়ামী লীগ- এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের নেতাদের নির্যাতন করেছেন। ৫ বছরে একমাসও বাড়িতে থাকতে পারিনি আমি। বিএনপি আমাদের ঘরে থাকতে দেয়নি। আর আপনারা বিএনপি নেতারা এসি রুমে বসে নেতারা বক্তৃতা দেন।
এ সময় চলমান বিদ্যুৎ সংকটকে বৈশ্বিক সংকটের অংশ বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিদ্যুতের সংকট সাময়িক, কিছুদিনের মধ্যে কেটে যাবে। যেই ক্ষমতায় থাকবে সেই এই সংকটের মুখে পড়বে। এরমধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার গিয়ে এলএমজির ব্যবস্থা করেছেন। কয়লার ব্যবস্থা করছেন, ১০-১৫ দিনের মাঝেই বিদ্যুৎ সংকট কেটে যাবে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে।
বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে তাদের শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুতের পরিবর্তে হাওয়া ভবনের তৈরি খাম্বা বসবে।
সরকার পদত্যাগ করলে বিএনপি কার সাথে সংলাপে বসবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফখরুল অবান্তর কথা বলছে, বিদেশিদের সাথে ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা করছে। ভিসানীতিসহ কিছু নিয়ে সরকার শঙ্কিত নয়। অপকর্মের জন্য বিএনপিকেই খেসারত দিতে হবে। ‘আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। কারণ আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বাংলাদেশে ৭৫ পরবর্তীকালে সবচেয়ে সফল সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। ৪৮ বছরের ইতিহাসে জনপ্রিয় নেতা তিনি।
মার্কিন ভিসানীতিকে আওয়ামী লীগ সরকার ভয় পায় না জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। অপকর্ম করলে বিএনপিকে এর মূল্য দিতে হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।