নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াসিম রানা তাহসানের (২৯) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (২ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে ছাত্রলীগ সভাপতিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওয়াসিম রানা তাহসান কবি নজরুল কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। বর্তমানে রাজধানীর নিমতলীর চানখাঁরপুর এলাকায় থাকতেন।
জানা গেছে, দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে চানখারপুলের একটি বাসায় আত্মহত্যা করেন রানা। তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক।
তার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু বলেন, শুক্রবার (৩ জুন) দিবাগত রাতে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করেন তারা। পরে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে রাত আনুমানিক সোয়া ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন যাবৎ ওয়াসিম রানা তাহসানের খুব মন খারাপ ছিল। একাকি থাকতে চাইতো, চুপচাপ থাকতো। তাই আমি তাকে বলেছিলাম, বন্ধু তুমি কিছু দিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস। তবে কী চিন্তা করতো সে ব্যাপারে কিছু বলতো না।
ওয়াসিম রানা তাহসান গত ছয় মাস যাবৎ কবি নজরুল কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন বলেও জানান ইমরান হোসেন বাবু।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম বলেন, সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সেটা জানাজানি করা হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকার একটি বাসায় থাকতেন।
রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের সামনে সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) আহাজারি করতে দেখা যায়। তিনি জানান, ওয়াসিম রানার সঙ্গে তার বিয়ে হয় ৭ বছর আগে। এতোদিন বিষয়টি কাউকে জানানো হয়নি। এক সপ্তাহ আগে ছোট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানা তার গায়ে হাত তোলেন। এ ঘটনার পর তার বাবা-মা রানার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে বলেন। ঘটনার দিন রাতেও রানা তাকে বাসায় ফিরতে বলেন। না গেলে আত্মহত্যা করার হুমকি দেন। সানজিদা আরও বলেন, ও এমনটা করবে আমি ভাবতেই পারিনি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহ-সভাপতি বলেন, আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কিনা তা সঠিক জানি না। মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, সরকারি কবি নজরুল কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াসিম রানাকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আমরা জানতে পেরেছি তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন প্রাথমিকভাবে সেটি জানা যায়নি। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি বংশাল থানাকে জানানো হয়েছে।