গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এতো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। কিছু ক্ষেত্রে আপনাদের (প্রার্থীদের) নিজেদেরকেই আত্মরক্ষার্থমূলক বা যেটা করণীয় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
বুধবার (১০ মে) দুপুরে জয়দেবপুরে গাজীপুর জেলা শহরের শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার অডিটোরিয়ামে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মাঠে যখন খেলা হবে তখন দুই পক্ষকেই খেলতে হবে। কেউ কালো টাকা বিতরণ করলে আরেকজনকে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বা পুলিশ এসে রাতারাতি সেটা প্রতিহত করবে, অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হবে না। এই কালো সংস্কৃতি থেকে আমাদের ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা কিছু করণীয়, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী করব। আমাদের চেষ্টার কোনো অভাব থাকবে না। তবে আমরা এককভাবে কিছু করতে পারব না। আমাদের সহযোগী প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব শক্তভাবে পালন করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। আমরা কিন্তু তাদের মুখ চেপে ধরতে পারছি না। যদি সম্ভব হতো ধরতাম। কিন্তু মুখ চেপে ধরতে পারবো না, পৃথিবীটা এখন উন্মুক্ত। এখন গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে শুধু আমরা না সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। নির্বাচন কিন্তু অর্থহীন নয়। নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে সেটি আপনারা পত্রপত্রিকা পড়লে বুঝতে পারেন। আমাদের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার কথা বলছে, যুক্তরাজ্য কথা বলছে, ইউরোপ কথা বলছে, জাপান কথা বলছে এমনকি ইউনাইটেড নেশনও কথা বলছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, গাজীপুরের যে নির্বাচনটা, এটি আমাদের কাছে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে এত বড় পরিসরের একটা নির্বাচন জাতীয়ভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করবে বলে আমরা মনে করি। এজন্যই গাজীপুরের নির্বাচনটা একটি মডেল হোক। আপনাদের সহযোগিতায় আপনাদের সদিচ্ছার উপর ভিত্তি করে এ নির্বাচন যেন একটা দৃষ্টান্ত বহন করতে পারে। সরকার বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেন আমরা যেন একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। মাঠে যখন খেলা হবে দুই পক্ষকেই খেলতে হবে। আমি যদি কালো টাকা বিতরণ করে থাকি আরেকজনকে কালো টাকা বিতরণে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনার এসে, পুলিশ এসে রাতারাতি সেটি করতে পারবে অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হবে না। তবে কালো সংস্কৃতি থেকে আমাদের ধীরে ধীরে উঠে আসতে হবে। আমাদের নির্বাচনের ব্যবস্থায় এখনো অনেক কালো সংস্কৃতি রয়ে গেছে। আপনাদের চেষ্টায় হয়তো একটি সময় আসবে সবাই সুশৃঙ্খলভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন এককভাবে তেমন কিছু করতে পারবে না। যদি আমাদের সঙ্গে সহযোগী প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন তাদের দায়িত্ব শক্তভাবে ও পেশাগতভাবে পালন করে না থাকে।
তিনি বলেন, ব্যালটের সুবিধা অসুবিধা আমরা বুঝি, ইভিএমের সুবিধা অসুবিধাও বুঝি। ইভিএমের ওপর আপনারা আস্থা রাখুন। এখানে হয়তো উপস্থিতি কম মনে হতে পারে। ব্যালটে উপস্থিতি অনেক সময় বেশি মনে হয়। কিন্তু সেটি কিন্তু ভালো উপস্থিতি না। কাজেই ইভিএমের যে উপস্থিতি হবে সেটি কিন্তু অনেক শুদ্ধ উপস্থিতি। আমরা যে ভোট দিতে চাই প্রত্যেকটি ভোটার তার একক ভোট প্রয়োগ করবে। একজন ভোটার ১০টি ভোট দেবেন না, ৫০টি ভোট দেবেন না। এটিই হচ্ছে ভোটাধিকার। এখানে যে রিপ্রেজেন্টেশন তৈরি হবে সেটিতেই জনমতের প্রতিফলন ঘটবে।
প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি জনপ্রতিনিধি হন তাহলে সত্যিকার অর্থে জনগণের ম্যান্ডেট আপনাদের থাকতে হবে। কালো টাকা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবেন না। কালো টাকা যতই বিতরণ করা হোক। যদি মনে করেন কন্ট্রোল করতে পারছেন না। তাহলে কালো টাকা গ্রহণকারীদের বলে দেবেন, কালো টাকা নিলেও নিয়েন ভোট কিন্তু স্বাধীনভাবে দিয়েন। আপনি যাকে বিশ্বাস করেন, যাকে ভালো মনে করেন ভোট তাকেই দিয়েন।
গাজীপুর শহরের রাজবাড়ি রোডে পিটিআই শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনারের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। এছাড়া নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী, সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।